Thursday, July 21, 2016

___স্নিগ্ধিত আকাশ___ (5th part)

___স্নিগ্ধিত আকাশ___
(5th part)
=====
সেদিন থেকে ও আমার পিছনে কাঁঠালের আঠার
মত লেগে গেল। সারাদিন আমাকে ওর সঙ্গে
রাখত।। দুষ্টুমি করত, খুঁনসুটি করত। আর সবথেকে
বেশী যেটা করত, সেটা হলো 'শাসন'! সারাদিনই
ও আমাকে শাসন করত।
মিষ্টি শাসন।।
.
এর পর থেকে সবাই আমাকে একটু সমীহ
করেই চলত। কেউ আমাকে কিছু বললে ওর আর
সেদিন স্নিগ্ধার কাছ থেকে রক্ষে ছিল না।।
.
প্রথমে প্রথমে ওকে খুব বিরক্ত লাগত।। আমার
দু'চোখের বিষ ছিল ও।।
সারাদিনই ও শুধু আমার সাথে ঝগড়া করত। সারাদিন
জ্বালাত আমায়। আমার কাছে ওর সবথেকে বড়
পরিচয় ছিল 'ডাইনী'! সকালে ভার্সিটি থেকে শুরু
করে রাতে ওর ঘুম না আসা পর্যন্ত আমার সাথে
ওর বকবকানি চলতই। প্রতিটি মূহুর্ত ওর ছায়ায় রাখত। ওর
কথার একটু এদিক ওদিক হলেই আমার উপর দিয়ে
পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ চলত।।
.
কিন্তু আস্তে আস্তে সব সয়ে গেলাম আমি।
ওর শাসন গুলো খুব উপভোগ করতে লাগলাম
আমি।
ওকে খুব ভালো লাগতে শুরু করল আমার। ওকে
এক মুহুর্ত কাছে না পেলে আমারও খারাপ লাগত।।
তবে এই না যে, আমি ওকে ভালোবেসে
ফেলেছি!
.
জীবনে কোন মেয়ের সাথে তেমন মিশিনি।
এত কাছাকাছি আসিনি কখনো। আর আমার জীবনে
স্নিগ্ধা আসার পর থেকে জীবনটাই যেন হয়ে
গেল স্নিগ্ধময়।।
.
মিষ্টি শাসন, ঝগড়া আর খুঁনসুটির মাঝেই কাটতে লাগল
আমার জীবন। তবে ওকে কখনো বন্ধুর
থেকে বেশী কিছু ভাবিওনি আর ভাবার চিন্তাও
করিনি!!"
.___@___
.
.
আচ্ছা! আপনারা বোর ফিল করছেন নাতো! এটা
কিন্তু কোন উপন্যাস না। এটা একটা গল্প।।
আপনাদের কাছে উপন্যাস মনে হচ্ছে, তাই না!!
জীবনটা গল্পের মত হলেও কারো কারো
জীবনটা একটা উপন্যাসের মত।।
.
আচ্ছা, আমার জীবন কাহিনীটা আপনাদের কাছে
কি উপন্যাসের মত লাগছে!??
হি.হি.হি।।
.
.
এইতো কেবল গেল আমার আর স্নিগ্ধার
পরিচয়ের ঘটনা। ওর সাথে আমার জীবনের
সময়গুলো মিশে যাওয়ার ঘটনা।।
.
আচ্ছা, আমি কোথায় যেন ছিলাম??
ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ঐতিহাসিক পাত্রী দেখে
এখন আমি বাসায় এসেছি।
আপনারাও আমার বাসায় আছেন তো???
.
.
পাত্রী দেখে বাসায় এসে তাড়াতাড়ি খেয়ে
দেয়ে শুয়ে পড়লাম। সারাদিন শরীরের উপর
দিয়ে যেই ধকল গেছে! আল্লাহই জানে, ঘুম
থেকে উঠার পর শরীরের কি অবস্থাই না যেন
হয়!!
.
কিন্তু ঘুম যে আর আসে না! শুয়ে শুয়ে শুধু
স্নিগ্ধার কথা ভাবছিলাম।
আচ্ছা! এমন পাগলী কেন ও!! হঠাৎ ই ওর কি হলো
যে, আমাকেই ওর বিয়ে করতে হবে!
আচ্ছা, ও কি আমাকে আগে থেকেই
ভালোবাসে???
.
ওকে যতই মন থেকে একটু দূরে সরাতে
চাচ্ছিলাম ততই ও আরো আমার হ্রদয়ের
গহীনে ঢুকে যাচ্ছিল।।
সকালের মিষ্টি আচরণ, কোমল ছোঁয়ায় আমি
এখনো আনমনা হয়ে আছি।
অন্তরের মুগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে ওকে সারারাত স্বপ্নে
দেখেই কাটিয়ে দিলাম।।
.
পরদিন ভার্সিটিতে গেলাম। গিয়েই দেখি সব
ফ্রেন্ডরা বসে আছে। কাল যে মেয়ে
দেখতে গিয়েছিলাম তা কাউকেই বলিনি। কিন্তু
কিভাবে যে খবরটা চাউর হয়ে গেল, তা বুঝলামই না!
.
এসব গোপন খবর যে কিভাবে বাতাসের বেগে
অন্যের কানে পৌঁছে যায়, তা বুঝাই মুশকিল।
অন্তত ওদের চেহারা দেখে এটাই অনুমান
করতে পারছি যে, কালকের অতি গোপন খবরটা
ওদের কানে পৌঁছে গেছে!
.
ওদের কাছাকাছি আসতেই ফাহিম বলে উঠল,
"কিরে! মেয়ে কেমন দেখলি??"
যা অনুমান করেছিলাম, তাই!!
ওদের কানে খবরটা পৌঁছে গেছে। আমি একটু
ইতস্তত বোধ করলাম।
এর মাঝেই রিয়াদ বলে উঠল,
"কিরে! আমাদের না বলে তো হবু ভাবি কে
ভালোই দেখে এলি!! ভালো!!"
এদিকে তছলিম বলে উঠল,
"ওই! মেয়েটা কে রে!! চিনিস নাকি??"
.
তছলিমের কথা শেষ না হতেই পিছন থেকে
একটি মেয়েলী কন্ঠ বলে উঠল,,
"হ্যাঁ, আকাশ ওই মেয়েকে চিনে। আমি! আমিই
সেই মেয়ে, যার সাথে আকাশের বিয়ে ঠিক
হয়েছে!!"
.
পিছনে তাকিয়ে দেখি স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে।। স্নিগ্ধার
কথাটা শুনে সবার মুখ যেন বিষ্ময়ে হা হয়ে
গেল।।
.
"এই যে হ্যালো! হা করে কি দেখছেন
আপনারা?? আমাকে কি জীবনে দেখেননি নাকি??
নাকি আমার রূপ ঠিকরে পড়েছে!!
নাকি আমার আর আকাশের সম্পর্কটা শুনে আকাশ
ভেঙ্গে পড়েছে আপনাদের মাথায়!! হাহ!!"
.
স্নিগ্ধার এমন ঝাঁঝালো আচরণে সবার সম্বিত ফিরে
এলো। বাস্তবে আসতেই সবাই ছিটকে দূরে
সরে গেল।। যেন কারেন্টের শক
খেয়েছে।
ওর মত মেয়ে যে কি জিনিষ, তা সবাই হাড়ে হাড়ে
জানে।।
.
ফ্রেন্ডরা সবগুলো একটু দূরে গিয়েই বলতে
লাগল,
"তুই গেছিস রে!! তোর জীবনটা পুরো
তেজপাতা হয়ে যাবে রে!! বিয়ে করা মানেই
জেলখানায় বন্দী হওয়া। আর তুই যাকে বিয়ে
করেছিস না, সে তো তোকে রিমান্ডগারে
রাখবে।। হা.হা.হা."
.
ওদের কথা শুনে আমার রাগ উঠে গেল কিছুটা!
এদিকে তাকিয়ে দেখি স্নিগ্ধার চেহারাও রাগে লাল
হয়ে গেছে।
গাল দুটো পাকা টমেটোর মত লাল হয়ে ফুলে
গেছে।।
.
আমি লজ্জায় যেই না চলে যেতে উদ্যত হলাম,
অমনি স্নিগ্ধা খপ করে আমার হাত ধরে নিচে বসাল।
পাশে ও' ও বসল। বসেই বলল,,
-- ওই যে মিষ্টার! খুব চালাক হয়ে গেছেন, তাই না!
(স্নিগ্ধা)
- না মানে,,, কই,,,,,, আমি আবার,,,,,,,, (আমি)
-- না, আপনি তো এখন কিছুই করেননি। আপনি তো
সাধুবাবু! আপনার এই অকর্মা বন্ধুগুলোর সাথে
আড্ডা দিচ্ছেন, আর উনারা আপনাকে বুদ্ধি দিচ্ছে
কিভাবে আপনি আমার হাত থেকে বাঁচবেন! আর
আপনিও ওগুলো খুব মন দিয়ে শুনছেন, তাই না!!
- না, কই,,,, ওরা এসব কিছুই বলেনি তো,, আর আমিও
এমন কিছু শুনছি না তো,,,,,,,
-- আপনি শুনছেন না গিলছেন সেটা ভালো
করেই দেখেছি আমি!!
তো সাধুবাবা! যতই যা'ই করুন না কেন! আমাকেই
আপনার বিয়ে করতে হবে... আর এটাই শেষ কথা!
মনে থাকে যেন!!
আর হ্যাঁ,, এর মাঝে যদি কোন কাটিকুটি করেন না!!
তবে দেব একটা.......
.
এই বলে হাতের মুষ্টিটা আমার দিকে তুলল স্নিগ্ধা!
আমি তো পুরাই ঘাবড়ে গেলাম।
যেই বজ্রমুষ্টি ওর!!
দেখে মনে হয়, রিলে সর্বকালের সেরা
চ্যম্পিয়ন ও।।
.
আমার এহেন দুরবস্থা দেখে ও মুচকি মুচকি
হাসছিল।।
আমার তখন রাগ ও হচ্ছিল, আবার লজ্জাও লাগছিল।
ওর হাতের মুঠো থেকে আমাকে কয়েক
সেকেন্ডের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল,,
এখন আবারও আমার হাতটাকে ওর হাতের মুঠোয়
পুরে নিল।।
গভীর অনুভবে হাতটা চেপে ধরল।।
আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি
হাসছিল।।
.
আমি লজ্জায় আরো জড়সড় হয়ে যেতে
লাগলাম!!!
.
.
.
চলবে_____,,,,,

No comments:

Post a Comment