Saturday, July 23, 2016

স্টুপিড লাভ স্টোরি - (১ম খন্ড)

▶ স্টুপিড লাভ স্টোরি - (১ম খন্ড)


- বিশ্বাস করো আলভি। সত্যি আমি তোমাকে
ভালবাসি।
- ওহ, কতটুকু জানেন আমার সম্পর্কে?
- কেন?
- কারন হুট করেই ভালবাসি বললেন তো তাই।
- জানার দরকার নেই।
- আচ্ছা।
- এখন বলো ভালবাসবে আমাকে?
- সরি।
- এত ভাব নিচ্ছো কেন? আগে তো সারাদিন
মেয়েদের পেছনে ঘুরতে, ফেসবুকে
ভালবাসার মানুষ খুজতে।
- তো?
- এখন আমি এসেছি, ফিরিয়ে দিচ্ছো কেন? আমি
কি দেখতে পচাঁ? এখনো অনেক ছেলেকে
ঝুলিয়ে রেখেছি।
- তাতে আমার কি?
.
কিছু সময় কি যেন ভাবলো রুহি। ছেলেটার মাথায়
তার ছেড়াঁ নাকি। বুঝতেই চাচ্ছেনা। যে তাকে
একটা মেয়ে কতটা ভালবাসে।
.
- ওকে ফাইন। একবার ভালবাসি বলো?
- সরি।
- এত ভাব কেন?
- দেখুন আমি কাউকে ভালবাসত পারবোনা।
মেয়েদের ঠিকমত আমি চিনি।
- মানে?
- আজকে আমাকে ভালবাসি বলেছেন,কাল অন্য
ছেলের বাইকের পেছনে বসবেন, হাত ধরে
ঘুরবেন, তা ভাল মতই জানি।
- এইসব কি বলো আলভি? সব মেয়ে কি এক?
আমাকে দেখে তোমার তাই মনে হয়?
- মুখ দেখে মানুষ চেনা যায় না। বাই দা ওয়ে এইসব
অভিনয় বাদ দিন। ভাল থাকবেন।
.
এই বলে রুহির সামনে থেকে চলে গেলো
আলভি। রুহি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। যে
ছেলেটাকে সে এত ভালবাসে। সেই
ছেলেটার কাছে তার ভালবাসার কোনো মূল্য
নেই? কি নেই তার, অর্থ, সুন্দরী, শিক্ষিতা, তবুও
সে তার ভালবাসার মানুষটিকে পেল না।
.
- আপনি আবার ফোন দিয়েছেন কেন?
- একবার ভালবাসি বলবা না?
- একটু অতিরিক্ত করছেন মনে হচ্ছেনা?
- আচ্ছা আমি কি করলে আমাকে ভালবাসবে?
- একটু শান্তি দিতে পারবেন? এইসব নাটক বন্ধ
করে।
- তুমি কি আমাকে একটুও বোঝোনা?
- দেখুন আপনার পায়ে পরি, আমার সাথে এমন
করবেন না।
- একি বলছো আলভি।
- এমনিতেই একজনের ভালবাসার অভিনয়ে আমার
জীবনটা শেষ হয়ে গিয়েছিল, এখন একটু শান্তি
তে থাকতে চাই প্লিজ শান্তিতে থাকতে দিন
প্লিজ?
.
সেদিনের মত কোনো কথা না বলে রুহি
ফোনটা কেটে দিয়ে ছিলো। সারা রাত ঘুমাতে
পারেনি সে। কি অদ্ভুত তাইনা? এমন একটা সুন্দরী
মেয়ে তার ভালবাসার মানুষটিকে পেল না। এটা
কোনো কল্পনা নয় বরং বাস্তবতা। আলভি একজন
কে ভালবেসে কষ্ট পেয়েছে। সেখান
থেকে ভালবাসাকে মূল্য দিতে ভুলে গেছে।
এমন টা তো হওয়ারই ছিলো। কাউকে বেশি
ভালবাসলে এমনই হয়।
.
.
ক্যাম্পাসে আসতেই, আলভির ফ্রেন্ড মুহিত একটু
অস্তিরতা নিয়েই সামনে এসে বলল...
.
- কাজ টা ঠিক করলি না দোস্ত।
- হইছে টা কি বল?
- তুই রুহি কে মেরে ফেলতে পারলি? অমন ফুট
ফুটে একটা মেয়ে, যার মুখে সব সময় হাসি
লেগে থাকত, তার সাথে এমন করতে পারলি তুই?
- আমি ওকে মারবো কেন?
- সালা মেয়েটার ভালবাসা কে কোন দাম দিলিনা? কি
দোষ ছিলো ওর?
- দেখ তুই তো সব জানিস ই?
- হ্যা, কিন্তু মনে রাখিস সব মেয়ে এক না। একবার
চিন্তা কর, যে মেয়েটা তোর জন্য জীবন
দিতে পারে? তার কাছে তুই তার জীবনের
থেকেও বেশি।
- কোথায় এখন ও?
- জ্ঞান ফেরেনি এখনো। হসপিটালে অজ্ঞান
হয়ে আছে।
- চল।
.
.
রুহি এখন মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছে। বাবা মায়ের
এক মাত্র মেয়ে। বাবা বিদেশে থাকে কিছু বছর
যাবত। মায়ের কাছে কিছু চাইলে, চাওয়া অপূর্ন
রাখেনা। কাল রাত থেকে হসপিটালে আছে রুহির
মা, ঘুম নেই খাওয়া নেই। কারন মেয়ের এখনো
জ্ঞান ফেরেনি।
.
- আন্টি রুহির জ্ঞান ফিরেছে?
- কি নাম তোমার, বাবা?
- আলভি।
- সুইসাইড করার চেষ্টা করার আগে তোমার জন্য
চিঠি লিখেছিল, তা আমি পড়েছি, সব জানি আমি। কেন
এমন করলে বাবা কেন? করলে বলো? কি
দোষ করেছিল আমার মেয়ে বলো?
.
-ফিরিয়ে দাও আমার সেই মেয়েকে ফিরিয়ে দাও
তুমি?
.
এই প্রশ্নের জবাব আলভির কাছে নেই। সত্যিই
দোষ তার। সবাই কে এক ভাবা উচিত না। কিন্তু তারও
কি করার ছিলো? যাক শেষ চেষ্টা টা করা যাক।
দেখা যাক কি হয়?
.
- আন্টি আমি কি একটু একা ওর সাথে থাকতে পারি?
- হ্যা। আমরা বাইরে যাচ্ছি, একমাত্র তুমিই আমাদের
শেষ আশা, দেখো কি পারো।
.
সবাই কেবিন থেকে বাইরে চলে গেলো।
রুহির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
আলভি। মেয়েটাকে কিভাবে সে এত কষ্ট
দিতে পারলো?
.
" রুহি? চোখ মেলে দেখো তোমার আলভি
এসেছে, প্লিজ? দেখো? তুমিও বুঝি সেই
মেয়েদের মত আমাকে একা রেখে চলে
যাবে? তোমাকে ছাড়া বুঝি খুব কষ্ট হবেনা
আমার? তোমার কিছু হলে কে আমার থেকে
ভালবাসি শুনতে চাইবে বলো? প্লিজ ওঠো,
প্লিজ? এখনো আমাদের অনেক স্বপ্নের বাকি
আছে। তোমায় নিয়ে অনেক ভালবাসা এই বুকে
বেধেছি, তুমি যদি না ওঠো, তাহলে কিন্তু অন্য
কাউকে ভালবাসা দিয়ে দিবো বলে রাখলাম "
.
.
এবার একটু একটু করে চোখ মেলে তাকাচ্ছে
রুহি। হাতের ইশারা করে আলভিকে কাছে
ডাকলো। রুহি কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু দুর্বল
হওয়ায় পারছেনা। তাই আলভি রুহির আরো কাছে
গেলো। আলভির কানে কানে রুহি বলল "
খবরদার,বলছি নয়ত কিন্তু তোমার খবর আছে"।
কথাটা শুনে একটু হেসে দিলো আলভি।
.
.
- মা আমার তুই ঠিক হয়ে গেছিস?
.
রুহির আম্মু এসে রুহিকে জড়িয়ে ধরলো। তাই
নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো আলভি। এবং তাদের একা
রেখে বেড়িয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালো। এখন
ফ্যামিলি Matter চলবে তাই এখানে থাকা উচিত নয়।
.
- আম্মু ও চলে যাচ্ছে তো, ওকে এখানে
বসতে বলো আমার কাছে।
.
রুহি ওর আম্মুকে বলল। তা দেখে রুহির আম্মু
বলল...
.
- এই ছেলে কোথায় যাচ্ছো? এখানে বসো?
.
এই বলে বাইরে চলে গেলো রুহির আম্মু।
আলভি গিয়ে পাশে বসলো রুহির।
.
- জানপাখি? আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিলে
কেন?
- ভাবলাম পরে আসি, তোমার আম্মু কিছু যদি মনে
করে।
- তাই বলে চলে যাবে, তুমি খুব পচাঁ। তোমার
সাথে কথা নেই যাও।
- আচ্ছা।
- আমাকে একটু জড়িয়ে ধরোনা প্লিজ? অনেক
কষ্ট দিয়েছো আর দিওনা? নয়ত আর খুজে
পাবেনা আমায়।
.
বুকে জড়িয়ে নিলো রুহিকে। কপালে একটি চুমু
একে দিয়ে বলল "কোথাও যাবোনা,কিন্তু প্রমিজ
করো আর কখনো এমন টা করবেনা?"
.
রুহি একটু হেসে বলল "করবোনা যদি তুমি
আমাকে ভালবাসো এতটুকু বলো?"
.
- আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি এখন
হইছে?
- না, আবার বলো?
- আমি আমার রুহি মনিকে অনেক ভালবাসি।
- সত্যি?
- হ্যা অনেক গুলো সত্যি এখন হয়েছে?
- হুম।
- তাহলে ম্যাডাম, আপনি কি এভাবেই হসপিটালে
থাকবেন নাকি সুস্থ হয়ে আমার হাত ধরে হাটবেন
বলুন? যদি না পারেন তবে অন্য হাত খুজে নেই?
- আমি সুস্থ। কিছু হয়নি আমার, আমি তোমার হাত
ধরে হাটবো।
- আগে তাড়া তাড়ি সুস্থ হও তারপর। এখন আমি আসি?
আবার পরে আসবো?
- না পরে যেও, একা একা আমি বোর হয়ে
যাবো,তুমি সারাক্ষন আমার পাশে থাকো, প্লিজ?
- আচ্ছা।
.
.
ভালবাসা খুবই অদ্ভুত। কেন যেন ভালবাসার অন্য
রকমের এক ধরনের শক্তি আছে। যার প্রমান
রুহি। যেখানে ডাক্তার বলেছিল সুস্থ হতে বেশ
সময় লাগবে। সেখানে মাত্র অল্পকিছু দিনেই রুহি
পরিপূর্ন সুস্থ হয়ে গেছে। এর সিক্রেট টা কি
জানেন তো?
.
" ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে হাটতে হবে নাহ???
বহুদিনের সখ ছিলো তার, তবে অসুস্থের মত
বিছানায় কেন পড়ে রইবে সে??? "
.
[ ভাল থাকুক, সুখে থাকুক, বেচে থাকুক, বেধে
রাখুক ওদের সেই অটুট ভালবাসাকে, এতটুকুই
প্রার্থনা, কারন সত্যিকারের ভালবাসা কখনো বৃথা
যায়না, যদি দুজনই ঠিক থাকে ]
অচিন পুরের রাজ

No comments:

Post a Comment