Saturday, July 23, 2016

গল্পঃ ভালোবাসার বিশ্বাস

গল্পঃ ভালোবাসার বিশ্বাস
.
>>>Munna (Mr. Villain)<<<
.
-রায়হান ... (অফিসের বস)
>আসসালামুআলাইকুম স্যার (আমি)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। অফিস ছুটির পরে
একটু আমার সাথে একটু দেখা করে যাবা।
>জ্বী স্যার।
অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময় বস এসে
কথাটা বললেন। কি কারনে দেখা করতে
বললেন তা জানিনা। মনে হয় অফিসের
কোনো জরুরি কাজের ব্যাপারে কিছু
বলবেন। তাই আবার অফিসের কাজের দিকে
মনোযোগ দিলাম।
.
অফিস টাইম শেষ হতে আর মাত্র আধাঘন্টা
আছে। এমন সময় দেখি বস ডেকে পাঠালেন
আমাকে,
>May I come in, sir?
-এসে রায়হান। বসো।
>ধন্যবাদ, স্যার।
-রায়হান, তোমাকে একটা জরুরি কথা বলার
জন্য ডেকে পাঠিয়েছি তা হয়তো তুমি
বুঝতে পেরেছো।
>জ্বী স্যার।
-তুমি প্রায় এক বছর ধরে আমার
কোম্পানিতে কাজ করছো। তোমার কাজ,
ব্যবহার আচরণ, কথাবার্তা দেখে আমি মুগ্ধ
হয়েছি। তাই তোমাকে কিছু বলতে চাই।
>জ্বী বলেন স্যার।
-তুমি তো জানোই, আমার একটা মাত্র
মেয়ে অধরা। এবার অনার্স তৃতীয়বর্ষে
পড়ছে। নিয়মানুযায়ী আমার পরে এই
কোম্পানির মালিক হবে আমার মেয়ে
জামাই। তুমি শুনেছো হয়তো কিছুদিন ধরে
আমার শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।
তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি দ্রুতই আমি আমার
মেয়ের বিয়ে দিয়ে এই কোম্পানি আমার
জামাইয়ের হাতে তুলে দিতে চাই।
>জ্বী স্যার, এটা তো খুবই ভালো কথা।
-রায়হান, তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে
করবে? এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ।
.
বসের মুখে কথাটা শুনে বেশ অবাক হলাম।
হঠাৎ করে বস এমন একটা প্রস্তাব দিয়ে
বসবেন সেটা আমি ভাবতেও পারিনি।
কিছুক্ষণ কথাটা নিয়ে চিন্তা পর বললাম,
>আমাকে মাফ করে দেবেন, স্যার। আমি
আপনার এই অনুরোধটা রাখতে পারবো না।
-আমার মেয়েটা অনেক ভালো। ও তোমাকে
পছন্দও করেছে। প্লিজ, তুমি না করো না।
> আমাকে মাফ করে দেবেন, স্যার। আমি
এটা পারবো না।
-রায়হান, তুমি জানো তোমার এই কথাটার
জন্য আমি ইচ্ছা করলে তোমাকে চাকরি
থেকে বের করে দিতে পারি।
>সেটা আপনি যখন ইচ্ছা তখন পারবেন।
কিন্তু আপনার অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমার
আশায় বসে থাকা মানুষটির সাথে আমি
কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি
বলেন স্যার।
-মানে??
>গ্রামের একটা সহজ সরল মেয়ে। যে নিজের
থেকেও আমাকে বেশি বিশ্বাস করে।
আমার আশায় সে পাচ বছর ধরে স্বপ্ন বুনছে।
আমি তার স্বপ্নগুলো ভেঙে দিতে
পারিনা। সেই অধিকার আমার নেই, স্যার ।
যদি আপনি আমাকে চাকরিটা থেকে বের
করে দেন তাতেও কোনো দুঃখ নেই। কারন
আমি জানি, ওই স্বপ্নবোনা মেয়েটি মৃত্যুর
আগ পর্যন্ত আমার আশায় বস থাকতে রাজি
আছে। আমি আজ আসি, স্যার। অনেক রাত
হয়ে গিয়েছে।
-আচ্ছা এসো। আমি কি তোমার সেই
স্পেশাল মানুষটির নাম জানতে পারি??
>অবশ্যই স্যার। মেয়েটার নাম স্নেহা।
-আমার কথা গুলোর জন্য আমি লজ্জিত
রায়হান। তোমাকে এই কোম্পানির খুব
প্রয়োজন। আর তোমার সেই স্পেশাল
মানুষটিকে আমার পক্ষ থেকে শুভ কামনা
রইলো।
>ধন্যবাদ, স্যার।
.
বসের সাথে কথা বলে বেরিয়ে এলাম।
অফিস থেকে আমার বাসা বেশি দুরে না।
হাটলে দশ মিনিটের পথ। আজ কেন জানি
অন্যদিনের মতো ক্লান্তি আমার ওপর ভর
করছে না। খুব ইচ্ছা করছে হাটতে আর
স্নেহার কথা ভাবতে। তাই রিকশা না
খুজে হাটতে শুরু করলাম। মেয়েটার সাথে
অনেক্ষণ কথা হয়নি। ফোন দিলাম,
-আসসালামু আলাইকুম। (স্নেহা)
>ওয়ালাইকুম আসসালাম। ব্যাপার কি??
ফোনটাকি সামনে নিয়েই বসেছিলেন
নাকি ম্যাডাম? রিং হওয়ার সাথে সাথেই
ধরলেন যে।
-কিছু কিছু মানুষের কন্ঠ শোনার আশায়
ফোনটাকে সামনে নিয়ে বসে থাকতে হয়
বুঝলেন জনাব? কেমন আছেন আপনি?
>হুম... কেমন আছি জানিনা। তবে একজনের
কথা খুব মনে পড়ছে।
-তাই বুঝি!! সেই একজনটা কে সেটা কি
জানতে পারি?
>হ্যাঁ ... তা জানতে পারো। তবে আমার
মনে হয় তুমি আগে থেকেই তা জানো।
-তাই নাকি!!! আমি কেমন আছি জানতে
চাইবেন না?
>ও হ্যাঁ ... ম্যাডামটা কি ভালো আছে
নাকি আবার অনেক আইসক্রিম খেয়ে
ঠান্ডা লাগিয়েছে?
-হি...হি...হি.... না, অপনি মানা করার পরে
আমি আর আইসক্রিম খেয়ে ঠান্ডা
লাগায়নি। এখন কি করছেন?
>এই তো, অফিস থেকে হাটতে হাটতে
বাসায় যাচ্ছি আর তোমার সাথে কথা
বলছি।
-কিহা!!! আপনি এখনও অফিস থেকে বাসায়
জাননি??? আপনি বাসায় না গিয়েই
আমাকে ফোন দিয়েছেন? ফোন কেটে দ্রুত
বাসায় যান। তারপর গোসল করে, খাওয়া
শেষ করে আমাকে ফোন দিয়েন। এখন
রাখছি। বাই।
>আচ্ছা। বাই।
.
মেয়েটা আসলেই একটা পাগলী। পাচ বছরের
প্রেম কিন্তু আজও তুমি বলেনি। সবসময়
আপনি। আমার গ্রামের পাশের গ্রামে
স্নেহাদের বাড়ি। রিলেশনটা শুরু
হয়েছিলো খুব সাধারণ ভাবেই। আমার
থেকে চার বছরের ছোট স্নেহা।
ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর থেকেই
আমাকে শহরে থাকতে হতো। যখন
হোস্টেলে থাকতে কষ্ট হতো তখন স্নেহাই
আমাকে বোঝাতো। এরপর অনেক কষ্টে এই
প্রাইভেট কোম্পানিটাতে চাকরি পাই।
তাই এই শহরেই একটা বাসা ভাড়া নিয়ে
আমরা কয়েকজন ব্যাচেলর চাকরিজীবী
থাকি। চাকরি পাওয়ার পরপরই স্নেহাকে
বিয়ের কথা বলেছিলাম। কিন্তু ও
বলেছিলো, "মাত্রই চাকরিটা পেয়েছেন।
এতো দ্রুত বিয়েটা করা ঠিক হবে না। আগে
বছরখানেক হোক তারপর এসব নিয়ে ভেবে
দেখা যাবে।"
.
একবছর প্রায় হয়েই আসলো। ওর বিশ্বাসের
অমর্যাদা করিনি আমি। আজ ইচ্ছা করলে
বসের কথাটা মেনে নিয়ে এই কোম্পানির
মালিক হতে পারতাম। কিন্তু কি লাভ হবে
তাতে? একজনকে কষ্ট দিয়ে কখনওই সুখ
পাওয়া যায় না। ভালোবাসার মূল
জিনিসটাই হলো বিশ্বাস। এটা ভেঙে
গেলে জীবনটা অতি তুচ্ছ হয়ে যায়। জানি,
এতোদিন অনেক স্বপ্ন বুনেছে মেয়েটা।
এবার সেগুলোকে পুরন করতে হবে। ভাবছি,
বাসাতে গিয়েই আম্মুকে ফোন দিয়ে
স্নেহার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে
যেতে বলবো। এবার দ্রুত পা চালাই। নয়তো
পাগলীটা ফোন করে বকাবকি শুরু করবো।
সবাই ভালো থাকবেন, বাই...।
..............সমাপ্ত...............
.
.
[Chip Nouko (অকর্মার ঢেঁকি)]

No comments:

Post a Comment