Monday, July 25, 2016

~~~না বলা ভালবাসা! ♥ ♥ ♥

~~~না বলা ভালবাসা! ♥ ♥ ♥
.
-- কিরে অয়ন, সারা রাস্তাই কি না ঘুমিয়ে
কাটাবি? একটু তো ঘুমা। (আম্মু)
-- এইতো ঘুমাচ্ছি, আচ্ছা আম্মু, এবার তাও
অনেক দিন পর নানুবাড়ি যাচ্ছি, তাই না?
(অয়ন)
-- হুম, তাও প্রায় দুই বছর। এবার আর বকবক না
করে ঘুমা।
-- ওকে, ঘুমাচ্ছি।
প্রায় দুই বছর পর আবার নানুবাড়িতে ঈদ
কাটাবে অয়ন। এইসব ভেবে ঘুমানোর জন্য
যেই চোখদুটো বন্ধ করেছে সে, আর সাথে
সাথেই তার চোখের সামনে একটি চেহারা
ভেসে উঠে। অয়নের মন চাচ্ছিল যেন সে
সারারাত অপরূপ সেই চেহারাটা দেখতে
থাকে। কিন্তু কি মনে হতেই চোখ খুলে
ফেলল সে। ঠিক করল যে, সে আর চোখ বন্ধ
করবে না। তাই সময় কাটানোর জন্য
ফেসবুকে লগইন করল। আজ আসার সময় অয়ন
নানুবাড়ি যাচ্ছে এই লিখে একটা পোস্ট
করেছিল। সেটাই চেক করছিল অয়ন। হঠাৎ,
চোখ আটকে গেল একটা কমেন্টে। সেখানে
লেখা, 'ধন্যবাদ'। ধন্যবাদ কেন??? কমেন্টটা
এসেছে একটা অপরিচিত আইডি থেকে যে
কিনা ওকে অনেকদিন ধরেই ফলো করে
আসছে। কিন্তু কে সে??? এসব ভাবতে
ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে অয়ন,নিজেও
টের পায় না!
ঘুম ভাঙে আম্মুর ডাকে,
-- অয়ন ওঠ, ভোর হয়ে গেছে, আর একটু পরেই
আমরা পৌঁছে যাব। বললাম যে, আগেই
ঘুমিয়ে নিতে, আর ঘুমালি কখন। এই ছেলে
যদি আমার একটা কথাও শুনে। (আম্মু)
-- হুম, উঠছি তো। (আমি)
.
আর দুইদিন পর কুরবানির ঈদ, তাই আজ একটু
বিশ্রাম নিয়েই মামাতো খালাতো ভাই-
বোনদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠল অয়ন।
অনেকদিন পর ওরা একসাথে হয়েছে। তাই
অনেক কথা মনে জমা ছিল। ঠিক এমনই সময়ে
ওদের আড্ডার মধ্যে একজন প্রবেশ করল।
সবার সাথেই তার কথা হচ্ছে, কেবলমাত্র
অয়ন ছাড়া। এটা তেমন কিছুই না, কারন
সবাই জানে ওরা পরস্পর কথা বলে না।
কিন্তু কেন ওরা কথা বলে না, এটা কেউ
জানে না। এমনকি অয়ন নিজেও জানে না।
যতক্ষণ সে ছিল একবারের জন্যেও অয়ন চোখ
তুলে তাকায় নি। চোখটাকে সে নিচে
নামিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ঐ চেহারা
থেকে ভেসে আসা কণ্ঠটা যেন বারবার
অয়নকে মুখ তুলে দেখার আগ্রহ জন্মে
দিচ্ছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়
সে। একটু পরে অয়নের মেজমামি আসে
অয়নের সাথে দেখা করতে।
-- কেমন আছ, বাবা অয়ন? (মামি)
-- ভাল আছি মামি, আপনারা সবাই ভাল
আছেন? (অয়ন)
-- আমরাও ভাল আছি।
-- আপনারা কখন এসেছেন, মামি?
-- তোমরা আসছ দেখে, আমি আর মিম সেই
কাল রাত থেকেই তোমাদের জন্য এখানে
অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু, এখন যাব। তুমি
কিন্তু আমাদের বাসায় অবশ্যই যাবা।
-- ইনশাআল্লাহ, যাব মামী।
এবার অয়নের মামী ওদের আড্ডায় পরে
আসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,
-- মিম, চল মা। পরে আবার আসিস।
সারারাত জেগেছিস। এখন বাসায় গিয়ে
একটু বিশ্রাম করে নিবি চল। (মামী)
.
এবার অয়ন মুখ তুলে তাকাল। এখন আর সে
নেই। তাই কোন সমস্যাও নেই। তারপর ওরা
আবার ওদের আড্ডা শুরু করল।
মামাতো ভাই-বোনদের মধ্যে অয়নের বড়
মামার ছোট ছেলে রিফাতের সাথে
অয়নের সম্পর্কটা সবচেয়ে ভাল, একেবারে
বন্ধুর মতো। আড্ডার শেষে সবাই চলে
যাওয়ার পর অয়ন আর রিফাত গল্প করতে শুরু
করল।
-- কিরে, তোর আয়েশার কি খবর? (অয়ন)
-- আরে ভাই, আর বলিস না, গত পরশু আমার
আর আয়েশার কথা সব্বাই জেনে গেছে।
-- মানে? মামা, মামি, সবাই?
-- শুধু কি আব্বু, আম্মু রে? ওর বাড়ির সবাইও
জেনে গেছে।
-- যাহ্। তারপর।
-- তারপর আর কি, সব বন্ধ। দেখা-সাক্ষাৎ,
কথা-বার্তা সব বন্ধ।
-- ভাল।
-- ভাল মানে? আচ্ছা তোর ব্যাপারটা কি
বলতো?
-- মানে? কোন ব্যাপার? (অবাক কণ্ঠে অয়ন)
-- মিমের সাথে কি তুই আর কোনো দিনই
কথা বলবি না?
-- হঠাৎ এই কথা কেন?
-- এমনি, তুই বলতো, কেন তুই মিমের সাথে
কথা বলিস না?
-- ইচ্ছা হয়না তাই। তাতে কি তোর কোনো
সমস্যা আছে? আর ও কি আমার সাথে কথা
বলে যে আমি বলব।
-- ওহ, বুঝছি।
-- হুম, বুঝলেই ভাল।
.
নানুবাড়িতে আসার পর থেকে কেউই যেন
অয়নকে একা থাকতে দিচ্ছে না। সবসময়ই
কেউ না কেউ ওর সাথে থাকছেই। অনেক
কষ্টে লুকিয়ে রাতে চেয়ার নিয়ে ছাদে
একা বসে বসে তার মনের সবচেয়ে গোপন
কথাটা ভাবছে। কথাটা এতটাই গোপন যে,
সেটা শুধুমাত্র সে ছাড়া আর কেউ জানে
না। এমনি তার প্রিয় ডায়েরীটাও না। সেই
কথাগুলো আবার কারো সামনে ভাবাও যায়
না। আজ সকালে এখানে আসার পর থেকেই
অয়নের সেই কথাগুলো ভাবতে ইচ্ছা করছে।
তাই সে বারবার একা থাকার চেষ্টা
করছিল।
.
আজ আকাশটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার। সুন্দর সেই
বাঁকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে অয়ন যেন
তার সেই ছোটবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে
গেল, যেখানে তার সেই প্রিয় বন্ধুটি তার
সাথে সারাক্ষণ ছিল। খেলাধুলা, আনন্দ,
দুষ্টুমি সবকিছুতেই তারা একসাথে ছিল।
কিন্তু এখন....। এখানে আসার পর থেকে
অয়নের বারবার সেই সুন্দর চেহারাটা
দেখতে ইচ্ছা করছে। না পেরে সে এবার
তার চোখদুটো বন্ধ করল, আর সাথে সাথেই
চোখের সামনে আজ সকালে লুকিয়ে লুকিয়ে
দেখা মিমের অপরূপ মায়া ভরা চেহারাটা
ভেসে উঠল। আজ মিমের চেহারাটা যেন
কেমন লাগছিল। ক্লান্তির চিহ্নটা স্পষ্ট
হলেও, একটা চাপা আনন্দ যেন ওকে অপরূপ
করে তুলেছিল। কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে এসব
ভাবছিল অয়ন, তা সে নিজেও জানে না।
ভাবনায় ছেদ পড়ল রিফাতের ডাকে।
-- কিরে তুই এখানে? আর আমরা কোথায় না
কোথায় খুঁজেছি তোকে। কিরে, ব্যাপার কি
তোর? এমন রোম্যান্টিক পরিবেশে একা
একা বসে আছিস! কার কথা ভাবছিস রে?
(রিফাত)
-- আরে ধুর, এমনি বসে ছিলাম। চল নিচে
যাই। (অয়ন)
.
নিচে আসতেই ছোট ভাই-বোনেরা বায়না
শুরু করল, তাদের সাথে নাকি অয়নকেও
লুকোচুরি খেলতে হবে। অগত্যা রাজি হয়ে
গেল অয়ন। খেলা শুরু হলে, লুকানোর জন্য
জায়গা খুঁজছিল সে। ঠিক এমন সময় রিফাত
সেই কোণার ঘরটির কথা মনে করিয়ে দিল
তাকে। অয়ন সাথে সাথেই সেই ঘরের দিকে
পা বাড়াল। ঐদিকে তেমন একটা কেউ যায়
না। তাই সেই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে
দিয়ে পিছনে ঘুরতেই সোফায় বসা একজনকে
দেখেই শিউরে উঠল। পরক্ষণেই সে নিজেকে
সামলে নিয়ে মেয়েটিকে চিনতে পারল। খুব
সুন্দর লাগছে আজ মিমকে। ছোটবেলার সেই
সাজগোজ করার শখটা এখনও আছে তাহলে।
ভাবতে ভাবতে মিমের চোখে চোখ পড়ে
অয়নের। সাথে সাথেই মুখ ঘুরিয়ে দরজার
দিকে হাঁটা ধরে অয়ন। ও জানে যে, এখন ঘর
থেকে বের হলেই ও ধরা পরবে।
তারপরেও.......
-- আমার প্রতি আপনাত কিসের এত রাগ?
কিসের এত ঘৃণা? যে আমার দিকে আপনি
তাকান পর্যন্ত না! (মিম)
-- (অয়ন নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলো শুনছে। আর
সাথে স্বস্তি ও অস্বস্তি দুটোই অনুভব
করছে। হ্যা, মিম ওরই সাথে কথা বলছে এই
ভেবে স্বস্তি, আর কি বলবে ওকে তাই
ভেবে অস্বস্তি পাচ্ছে)
-- কি? কিছু তো বলুন। কেন আমাকে আপনি
এত ঘৃণা করেন? কি করেছি আমি? কেন এত
বছর ধরে আমার সাথে একবারের জন্যেও
কথা বলেন না?
-- (নিশ্চুপ)
-- উফ্ফ। কি? এখনো কথা বলবেন না? অন্তত
এটা তো বলেন যে কোন কারনে আপনি
আমার সাথে কথা বলেন না? (কিছুটা
কান্নার স্বরে)
-- হ্যা, আমি তোমাকে ঘৃণা করি। ঘৃণা করি
বলেই আজ সকালে তোমাকে ছোট মামার
ঘরে গিয়ে লুকিয়ে দেখেছি। আড্ডার সময়
মাথা নিচু করে কোলের উপর রাখা
মোবাইলে তোমার মুখটা দেখেছি। ঘৃণা
করি বলেই আজও চোখ বন্ধ করলে শুধু
তোমাকেই দেখি। (কান্নার স্বরটা যেন
অয়নের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিল। তাই সে
এগুলো বলেই বাইরে বেরিয়ে গেল)
.
"কেবল তখন এইটে নতুন ক্লাস করছি। এমনই
একদিন নানুবাড়ি এসে জানতে পারি যে,
মিম নাকি ওদের এক স্কুলের ছেলের সাথে
প্রেম করে। ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়ে
প্রেম করে শুনে যতটা না অবাক
হয়েছিলাম, তার চেয়ে বেশি হয়েছিলাম,
মিম প্রেম করে শুনে। তারপর থেকেই
মিমের সাথে তেমন একটা কথা বলা বন্ধ
করি। আর মিমও আমার সাথে আর তেমন
একটা কথা বলে না। এভাবেই আমাদের
বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আজ আবার
প্রায় ছয় বছর পর ওর সাথে কথা বললাম।
কিন্তু এগুলো কি বললাম। এগুলো বলা কি
ঠিক হলো?" চাঁদের দিকে একটানা তাকিয়ে
ভাবছিল অয়ন।
-- অয়ন? তুই এখানে কি করিস? এই খোলা
মাঠে একা একা কি ভাবছিস? (রিফাত)
-- আআরে ক-কই কিছু না তো, কিছু না তো।
(ভাবনার জগত থেকে বিদায় নিতে যেয়ে
কথাগুলো যেন বেধে যাচ্ছিল অয়নের)
-- কিরে, তোর চোখের পাপড়িগুলো ভেজা
ভেজা কেন? কাঁদছিলি নাকি তুই?
-- আরে না না, এমনি। ও কিছু না।
-- চল, বাসায় চল। সবাই খেতে ডাকছে।
.
রাতে খেয়ে শুয়ে পরে অয়ন যদিও সে জানে
যে আজ তার আর ঘুম হবার নয়। তবুও অনেক
কষ্টে রাতটা পার করে। পরদিন সকালে
রিফাত অয়নকে জোর করে এক জায়গায়
বেড়াতে নিয়ে যায়। ঈদের আগের দিন একটু
মজা করে নেয় ওরা। কিন্তু রাতে বাসায়
গিয়ে তারা তাদের সেই বাসাকে যেন আর
চিনতে পারে না। লাইটিং আর
ডেকোরেশনের জন্য তা যেন এক রাজবাড়ি
মনে হচ্ছে। প্রচুর মেহমানদের মধ্যে বাসায়
যেতেই সবাই অয়নকে আর রিফাতকে নতুন
জামা-কাপড় পড়িয়ে দিল। ভাবখানা এমন,
যেন আজ ওদেরই বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু আসলে
যে কি হচ্ছে তা একমাত্র অয়নই জানে না।
পরে জানতে পারে আজ নাকি রিফাত আর
আয়েশার বিয়ের engagement হবে। ওদের
engagement-এর পর পরই বলা হল, শুধু রিফাত
আর আয়েশার না, আরো একটা জুটিরও নাকি
আজ engagement হবে। এই বলে সাথে সাথেই
অয়ন আর মিমকে ডাকা হলো। এই শুনেই অয়ন
যেন জ্ঞান হারায়, কি বলছে এসব? অবুঝ
বালকের মতো অয়ন ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। দুই
তিনবার ডাকার পর অয়নের হুশ ফিরল। হুশ
ফিরতেই দেখে মিম already স্টেজে উঠে
গেছে আর সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
তাই অয়নও আর দেরি না করে স্টেজে উঠে
পরে। মিমকে আংটি পড়ানোর সময় ওর
চোখের দিকে তাকিয়ে অয়ন যেন ওর জন্য
মিমের চোখে অশেষ ভালবাসার খোঁজ
পায়। আর অয়নও ওর চোখ দিয়ে মিমের জন্য
ওর ভালবাসা প্রকাশ করে। অয়ন যখন
মিমকে আংটি পরাচ্ছিল ঠিক তখন মিম
ওকে আস্তে করে 'ধন্যবাদ' বলে। সেটা
শুনেই অয়ন ওকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে
আর কানের কাছে গিয়ে দুইবার welcome
বলে। মিম সেটা বুঝতেই হেসে ফেলে। আর
অয়ন অপলক নয়নে তার মিমের দিকে চেয়ে
থাকে।
.
অনুষ্ঠানের পর ছাদে......
-- আচ্ছা, বাসায় সবাই এসব জানল কি করে?
(অয়ন)
-- আসলে তোর আগেই বাড়ির সবাই জানে!
(রিফাত)
-- মানে?
-- মানে হচ্ছে গিয়ে, তোর আম্মু আর মেজ
কাকু তোদের বিয়ের কথা পাকাপাকি করে
রেখেছিল যখন তোরা খুবই ছোট ছিলি। আর
কালকে তোর আম্মু তোকে দেখে আমাকে
জিজ্ঞেস করে যে তোর কিছু হয়েছে কি
না, আর আমিও তোর আর মিমের সাথে কথা
বলে সব বুঝেছিলাম। তাই ফুফুকে সব বলে
দেই। তারপর তো..... দেখতেই পারছিস কি
হলো।
আর এভাবেই যেন অয়নের না বলা
ভালবাসাটা সত্যি হয়ে গেল......।
.
কল্পবিলাসী বালক (অমিত হাসান)।

No comments:

Post a Comment