Saturday, July 23, 2016

গল্পের নামঃ একটি পাগলী মেয়ে

গল্পের নামঃ একটি পাগলী মেয়ে
.
লেখাঃ_Alvi_Ahmed_Shawon (স্টুপিড লাভার)
.
.
১।
~
ক্লাসের সব থেকে নিশ্চুপ মেয়েটি হচ্ছেন
অনিমা। শ্যামলা বর্ণের কারনে কেউ তার সাথে খুব
একটা বলতো না। তাই বেশিরভাগ সময়ই সে একা
থাকতো।
.
.
এছাড়া আলভি যখন ক্লাসে আসতো, তার বন্ধু
মহলের সবাই তার গায়ের উপরে প্রায়ই ঢলে
পড়তো। কারন সবার প্রিয় সে।
.
.
এর অবস্য খুব কারন আছে। সেটা হলো ক্লাসের
চৌদ্দটা বাজানো ছিলো আলভির কাজ। এই যেমন
মৌসুমি ম্যাডামের ক্লাসে তার দিকে মজা করে
আনমনে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকা। আর
ম্যাডামের দেয়া শাস্তি। হিসেবে কান ধরে
দাড়িয়ে থাকা।
.
.
ভাল ছাত্রদের মাঝে বসতো সব সময় আলভি।
যাতে করে ওরা যা বোঝে তা বুঝতে পারে।
এমনকি সেইসব ছাত্র গুলোও খুব বিরক্ত হতো।
এরও একটা কারন হলো একটু পর পর খোচা দিয়ে
বলতো "এই ভাই কি বুঝালো বলতো??"
.
অর্থা পাশের ভালো ছাত্র গুলোকে এভাবেই
বিরক্ত করে পড়া হাসিল করে নিতো। এমন কি
ওদের কে দিয়ে নোট ও লিখিয়ে নিতো।
.
.
২।
~
ক্লাসের মাঝে সব সময় একটি মেয়ের দিকে
নজর যেতো আলভির সে হল অনিমা। মেয়েটা
সব দিক দিয়ে পার্ফেক্ট। আর ক্লাসের মধ্যে খুব
ভালো একটি ছাত্রী। তাই তার সাথে মজা নিজে এবং
নিজের নোট লিখানোর চান্স হারাতে চাইলোনা।
সে।
.
.
-- তো ফ্রেন্ডস, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, নতুন একটা
পেয়েছি সেখানে যাচ্ছি।
-- আরে আলভি কই যাস?
-- ওই মেয়েটার নাম কি?
-- ওর নাম অনিমা, খুব ভালো ছাত্রী, কিন্তু সবাই ওর
সাথে বেশি কথা বলেনা।
-- কেন?
-- মেয়েটা শ্যামলা বর্ণের তাই।
.
.
কথা টা শুনে কিছুটা খারাপ লাগে আলভির। তাই সে তার
দুষ্টুমি বুদ্ধি বাদ দিয়ে ভালো ভাবেই বন্ধুত্ব
করতে চায় অনিমার সাথে।
.
.
তাই হুট করে অনিমার পাশে গিয়ে বসে পড়ে। এবং
অনিমা যেহেতু জানে আলভি খুব দুষ্টু ছেলে তাই
সে কিছু মনে করেনা বরং একটু হাসি দিয়ে পাশে
সরে বসে।
.
.
-- হাই আমি আলভি।
-- হ্যালো আমি অনিমা।
-- তোমার নামে খুব শুনলাম।
-- কি?
-- তুমি ভালো, এবং বুদ্ধিমতী ছাত্রী।
-- তাই বুঝি পাশে এসে বসলে?
-- জানিনা, আচ্ছা আমরা দোস্ত হতে পারি?
-- হুম।
.
.
দুজনে হাত মিলিয়ে বন্ধুত্ব করে। একটু পর দুজনই
তাদের ক্লাসের দিকে মনোযোগ দেয়। কিন্তু
একটু পর পর আবার একজন অন্যজনের দিকে তাকায়
এবং মুচকি হাসে।
.
.
এভাবেই চলতে থাকে তাদের বন্ধুত্ব। ক্লাসের
সবাই খুব অবাক হয় কারন যে মেয়েটির সাথে
কেউ খুব একটা কথা বলেনা। সেই মেয়ের
সাথে আলভির এত কি??? এই নিয়ে সারা ক্লাসে খুব
গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
.
.
এমনকি ক্লাসের স্যার ম্যাডাম গুলোও এই গুজব
গুলো শুনে ফেলছে। কারন একটা ভদ্র ছেলে
থেকে একটা দুষ্টু ছেলের প্রতি অনেকেই
ইন্টারেস্ট দেখায়।
.
.
এই সব গুজবে কান দেয়না ওরা। কারন ওরা খুব ভাল
বন্ধু হয়ে গেছে। তাই এইসব গুজবে কান দেয়ার
কোনো প্রয়োজন বোধ করেনা।
.
.
সেদিন ছিল ফ্রেন্ডশীপ ডে। যেহেতু আলভি
ছিল অনিমার সব থেকে বেষ্ট বন্ধু। তাই অনিমা সব
সময়ই দুষ্টু টার কেয়ার করে। এবং তাই সেদিন ওর
জন্য গিফ্টও এনেছিল।
.
.
চলতে থাকে বন্ধুত্ব। কিন্তু হটাৎ অনিমা কেমন
যেন পরিবর্তন হতে থাকে। আচরনে পরিবর্তন
লক্ষ্য করে আলভি।
.
অনিমা আগে এমনটা কখনো করেনি, কিন্তু এখন
এমন করে। কথায় কথায় চোখ মারে আলভিকে,
কিন্তু দুষ্টুমি ভেবে কিছু মনে করেনা আলভি।
.
আবার মাঝ রাতে ফোন দিয়ে খুব কথা বলতে চায়।
সারাদিন ফোন দিতেই থাকে। যেন একটা মুহুর্ত
আলভিকে ছাড়া থাকতেই পারেনা।
.
ছুটির দিন গুলোতেও দেখা করতে চায়। ক্লাসে
মাঝে মাঝেই হাত চেপে ধরে রাখে আলভির।
যদিও এই নিয়েও অনেক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবুও
কানে নেয়না। এই ভেবে যে "অনিমা আমার খুব
ভালো ফ্রেন্ড"।
.
.
সব থেকে বড় ধামাকাটা তখনো বাকি ছিলো। কিন্তু
সেটাও হয়ে গেলো। ভ্যালেনটাইন্সে, যেটা
কখনো ভাবেনি আলভি। কিন্তু সেটাই হয়ে
গেলো।
.
.
৪।
~
সেদিন ভার্সিটিতে খুব সেজে এসেছিল অনিমা।
একদম ফুল একটি পরীর মতই। চোখে কাজল,
কপালে টিপ, ঠোটে হালকা লিপস্টিক, হাত ভর্তি চুড়ি
ও মেহেদি দেয়া, কানে দুল, আর শাড়িতে
আরো বেশি আকর্ষনীয় লাগছিল তাকে।
.
.
এই প্রথম শাড়িতে দেখলো আলভি অনিমাকে।
ক্লাসের সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমান
দিকে। এক অপরূপা লাগছে অনিমা কে যা ভাবার
বাইরে।
.
.
আসলে শ্যামলা বর্ণের মেয়ে গুলো এমনই,
ওদের চোখ দুটো সুন্দর হয়, ঠোট দুটো
সুন্দর হয়, নাকটা সুন্দর হয়। আর ওরা সব সময় কিন্তু
সাজে না। মাঝে মাঝে সাজে। যাতে তাদের
স্পেশাল দেখা যায়। কারন যারা প্রতিদিন সাজে
তাদের মাঝে অাকর্ষনীয় কিছু থাকেনা।
.
.
তাছাড়া বেশির ভাগ সুন্দরী মেয়েদের মুখের
গড়ন সুন্দর হয়না, দাত বাকা থাকে, ঠোট টাও যেন
কেমন থাকে। শুধু ফর্সা ই হয়ে থাকে তাড়া।
.
.
কিন্তু অনিমা শ্যামলা বর্ণের হয়েও খুব
আকর্ষনীয় লাগে তাকে যেন সব সুন্দরী
মেয়েরাও তার কাছে হার মানে। হা করে ক্লাসের
সকলে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। তার
ফ্রেন্ডটা একটু সুইট সে কখনো ভাবেনি।
আসলে কখনো ঠিকমত তাকায়ই নি।
.
.
অনিমার পাশে এসে বসে পড়ে আলভি। এবং অনিমা
কাধে মাথা রেখে, কানের কাছে মুখটা নিয়ে
বলে।
.
- দোস্ত ক্রাস খাইছি রে??
- তাই, কার উপ্রে???
- তোর।
- কেমন লাগছে আমায়??
- অনেক ভালো।
- থ্যাংকু।
.
.
অনেক ক্ষন হাসা হাসির পর। দুজনে বাইরে
বেড়িয়ে পড়ে অন্যরা যেভাবে আজকের দিনে
ঘুরে ঘুরে মজা করে। তারাও আজ করবে।
.
সবই ঠিক ঠাক ছিলো। সারাদিন ঘুরলো দুজনে।
কিন্তু পরে অনিমা যেটা বললো সেটা কখনো
ভাবেনি আলভি। আসলে অনিমা কে ভালো লাগে
সেটা অন্য রকম। বন্ধুত্বের ব্যাপার অন্যরকম।
কিন্তু ভালবাসা!!!! না সেটা সম্ভব না।
.
.
তাই অনিমা কে বলল যেন তারা উভয়েই খুব ভালো
বন্ধু হয়ে থাকে। এর থেকে বেশি কিছুই না।
কারন বন্ধুত্ব আর ভালবাসা টা সম্পূর্ন অন্যরকম।
.
.
৫।
~
আলভির সাথে যোগা যোগ সম্পূর্ন রূপে বন্ধ
করে দেয়। অনিমার কোনো দেখা মিলছেনা
যখন তখন খুব ঘাবড়ে যায় আলভি।
.
.
তাই অনিমার বাসার উদ্দেশ্যে এক বান্ধবীকে
সাথে নিয়ে অনিমার বাড়িতে যায়। এবং ফ্লাটের কলিং
বেলটা বাজতেই একজন ভদ্র মহিলা দড়জা খুলে
দেয়। এবং মহিলা কে দেখে সালাম দেয় আলভি।
.
.
- কে বাবা তোমরা??
- আন্টি আমরা অনিমার ফ্রেন্ড।
- ওহ ভেতরে আসো কি নাম তোমাদের?
- আন্টি আমার নাম আলভি, আর ও নিরুপমা।
- তুমি আলভি???
.
.
একটু অবাক হয়েই বললো, অনিমার আম্মু। কেমন
যেন একটু ইতস্তত হয়ে বলল সে " ওহ তুমি
তাহলে আলভি??"
.
"জ্বি আন্টি আপনি কি আমাকে জানেন? আই মিন
আনিমা কি কখনো আমার কথা আপনাকে
বলেছে???" জিগ্গাসা করলো আলভি।
.
.
"হ্যা বলেছে, আচ্ছা তুমি কি কিছুই জানো না??"
অনিমার আম্মু জিগ্গাসা করলেন। ঘটনায় যেন নার্ভাস
হয়ে যাচ্ছে আলভি "কি হয়েছে আন্টি অনিমার??"
.
.
"তেমন কিছু না আবার অনেক কিছুই হতে পারতো
যদি না সঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে যেতাম"
কথা টুকু বলে একটু গম্ভীর হয়ে যায়।
.
.
এরপর আবার বলে "আমি জানি আমার মেয়েটা
শ্যামলা বর্ণের তাই বলে কি সে ভালবাসার যোগ্য
নয় কি?? সেদিন কেমন যেন লাগছিল ওকে,
বাইরে থেেক এসে হুট করে নিজের রুমের
দড়জা টা বন্ধ করে রাখে এবং প্রতিদিনের মত
বলেনি আম্মু খুব ক্ষুধা লেখেছে।
.
তাই আমার সন্দেহ হয়েছিল, সেজন্য যখন
ডুপ্লিকেট চাবী দিয়ে ওর ঘরের দড়জা টা খুললাম
দেখি সে তার হাত একটা ছুড়ি দিয়ে কেটেছে।
এবং খুব রক্ত ক্ষরনে অজ্ঞান হয়ে আছে। এবং
তার বিছানার ওপরে তার প্রিয় ডাইরিটা তে শুধু লেখা
রয়েছে, *আমি তোমাকে খুব ভালবাসি আলভি*।
.
.
-- আন্টি এখন কোথায় সে???
-- ওর রুমে শুয়ে আছে, সারাদিন বিষন্ন থাকে
মেয়েটা আমার।
.
.
অতঃপর বুকে খুব সাহস নিয়ে অনিমার ঘরের দিকে
পা বাড়ায় সে। এবং দেখে অনিমা খাটের ওপরে
বসে, জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
- অনিমা ???
.
কথা টা শুনে মাথাটা ঘুরিয়ে আলভির দিকে তাকায়।
অনিমা এবং বলে "কেন এসেছো??"
.
.
-- তোমার জন্য এসেছি আমি।
-- চলে যাও আমি তোমার কেউ নই।
-- সত্যি কি তাই?
-- হ্যা সত্যি।
-- ঠিক আছে তাহলে বরং চলে যাই।
.
.
এই বলে যখন পেছনের দিকে পা বাড়ায় আলভি।
হুট করে বিছানা থেকে নেমে অনিমা এসে দড়জা
টা লাগিয়ে দেয় এবং বলে "দেখি এবার কি করে যাও
তুমি"। ঘটনায় খুব হাসি পায় আলভির। মেয়েটা একদমই
পাগলী, এইতো বললো চলে যাবার জন্য আবার
নিজেই এসে দড়জা টা লাগিয়ে দিলো।
.
.
- কি ভাবছো? হ্যা?
- না কিছুনা।
- শোনো তোমার ওপরে অভিমান করেছি।
- সেটা বুঝেছি।
- আমার অভিমান ভাঙাও নয়ত যেতে দিবো না।
- হাহাহা। ঠিক আছে তবে তো আমি তোমার
সাথে এই রুমেই থাকবো।
.
.
হটাৎ হুট করে আলভিকে জড়িয়ে ধরে অনিমা।
ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায় আলভি।
.
.
-- তুমি এমন করেছো কেন? এই দেখি কি অবস্থা
করেছো হাতটার???
-- তোমার জন্য,, সেদিন তুমি বললে কেন
আমাকে ভালবাসবেনা।
-- তাই বলে এমন করবে তুমি??
-- হ্যা, নেক্সটাইম আরো বড় কিছু করবো।
-- এই চুপ একদমই না।
-- ঠিক আছে তাহলে ভালবাসতে হবে আমাকে।
-- হুম।
-- কি???
-- ভালবাসবো তোমায়, তবে প্রমিজ করো Next
টাইম এমন করবা না?
- হুম।
.
.
হটাৎ আলভির বুক থেকে সরে যায় অনিমা। এবং
আলভি অবাক হয়ে বলে " কি হয়েছে?? " ঠিক
তখনই অনিমা বলে ওঠে "এই আমিনা তোমার
ওপরে অভিমান করেছি??? আগে আমার অভিমান
ভাঙাও"।
.
.
খুব হাসি পায় আলভির। কি পাগলী মেয়ে একটা এত
সময় অনেক কিছু হয়ে গেলো তবুও অভিমান টাই
ভাঙলো না মেডামের।
.
.
- কি করতে হবে???
- কানো ধরো।
- কি কানে??
- হুম ধরো।
- আচ্ছা।
- ওয়েট ওয়েট।
.
.
এই বলে হাতটা ধরে আলভি কে অনিমার আম্মু এবং
নিরুপমার সামনে নিয়ে এসে বলে, এবার কানে
ধরে উঠ বস করো, যাতে আমার আম্মু বুঝতে
পারে তুমি আমার অভিমান ভাঙানোর চেষ্ট
করছো।
.
.
ঘটনায় সবাই খুব জোরে হেসে ওঠে। এবং
অনিমার আম্মু বলে উঠে "থাক থাক লাগবেনা যাও
তোমরা ঘরে যাও"।
.
.
আলভি ভাবতে থাকে "কি ডেন্জারেস মেয়ে
বাবারে, ভবিষৎ তে যদি কখনো আবার এই
মেয়েটা অভিমান করে তবে তো আমার
বারোটা বাজবে, তার থেকে ভালো Next time
সতর্ক থাকতে হবে যেন কখনো না অভিমান
করে, নয়ত মান সম্মানের পনেরোটা বাজিয়ে
ছাড়বে। আমার কপালেই এমন জিএফ পড়লো
কেন রে মামা Why me???" না জানি ভবিষৎ এ কত কান
ধরা আরো বাকি আছে ""।
~
~
~
লেখাঃ Alvi Ahmed Shawon (স্টুপিড লাভার)

No comments:

Post a Comment