Thursday, July 21, 2016

___স্নিগ্ধিত আকাশ___ (7th part)

___স্নিগ্ধিত আকাশ___
(7th part)
=====
দুজনই চুপচাপ ছোট একটা বেঞ্চিতে বসে আছি।।
আমারা কেউই কারো সাথে কোন কথা বলছি না।।
ওল চেহারার এই অবস্থা থেখে আমারও মন খারাপ
হয়ে গেছে।।
.
অতঃপর নিরবতা ভেঙ্গে স্নিগ্ধাই বলে উঠল,,
"তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।।"
- হুম, সেজন্যই তো এখানে আনলে., বলো,
কি বলবে!! (আমি)
-- (চুপ)
- কি, বলবে না??
--(চুপ)
.
ওর চোখের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম,,
ওর চোখ পানিতে পরিপূর্ন হয়ে আছে।। যেন
যেকোন সময়ই বাঁধ ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়বে।।
- কি হলো! বলবে না?? (আমি)
নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে ও বলল,,
-- হ্যাঁ, বলছি তো,,,
- (চুপ থাকলাম আমি)
.
-- (অনেক্ষণ নিরবতা),,,,,,,,, "তুমি যেদিন আমার
কাছে ওই লাভ লেটারটা নিয়ে এসেছিলে,, সেদিনই
তোমাকে প্রচন্ড ভালো লেগে গিয়েছিল।।
সেটাই ছিল কোন ছেলের প্রতি আমার প্রথম
ভালো লাগা।।
আমার প্রথম ঝাড়ি খেয়ে তুমি যখন ভয় পেয়ে
গিয়েছিলে, তখন তোমার চেহারা দেখে আমার
খুব হাসি পাচ্ছিল।।
তোমার চেহারাটা তখন খুব মায়াবী লাগছিল।।
.
তুমি বলেছিলে, চিরকুটটা একটা লাভ লেটার।।
কিন্তু আমি সেটা পড়ে যখন দেখলাম, সেটা তো
কোন লাভ লেটারই না!!
উল্টা সেখানে তোমার কথা বলা হয়েছে।। আর
আমার সাহাস দেখতে চেয়েছে।। প্রথমে
প্রচন্ড রাগ উঠে গিয়েছিল। তখনই তোমাকে
কয়েক ঘা বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল।।
কিন্তু যখনই তোমার দিকে ভালোভাবে তাকালাম,
তখন সত্যিই বুঝলাম, তোমাকে আমি সত্যিই কিছু
বলতে পারব না।
কোন ছেলের সামনে এই প্রথম নিজেকে
অসহায় লাগল।। কিন্তু তোমাকে আমি সেটা
বুঝতে দেইনি।।
সেদিন সত্যিই তোমার মায়াবী চাহনিতে আমি
হারিয়ে গিয়েছিলাম।
.
তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিলাম।। তোমাকে
শাসন শুরু করলাম.। তোমার সাথে রাগারাগি করে
তোমাকে বন্ধু বানিয়ে নিলাম।।
প্রথমে থেকেই তোমাকে ভালো লাগত।।
কিন্তু এই ভালো লাগাটাই যে একসময় তোমাকে
আমার হ্রদয়ে গেঁথে দিবে তা কখনো ভাবিনি।।
আস্তে আস্তে তোমার উপর আরো দুর্বল
হয়ে গেলাম আমি।।
তখন থেকেই তোমার উপর আরো বেশী
নজর দিলাম।। তোমার ভুল গুলো শুধরে দিতে
চেষ্টা করতাম।। আর এজন্যই তোমাকে শাসন
করতাম, ঝগড়া করতাম তোমার সাথে।। কিন্তু তুমি
সেটা কিভাবে নিয়েছ সেটা আমি আজও জানিনা.।
.
তোমাকে খুব ভালো লাগত।। সবসময়ই
ছেলেদের প্রতি আমার খারাপ ধারনা ছিল। কিন্তু
তুমিই প্রথম পুরুষ, যাকে দেখে আমার সব ভুল
ধারনা মুছে গিয়েছিল।
ইচ্ছে করছিল তোমার ভিতরে ঢুকে দুজনে
একাকার হয়ে যাই।।
.
কিন্তু এটাও জানতাম যে, তুমি আমাকে পছন্দ কর না।
তোমাকে আমি যেই কষ্ট দেই তাতে পছন্দ না
করারই কথা।
উল্টো আরো ঘৃনা সৃষ্টি হওয়ার কথা।।
.
কিন্তু বিশ্বাস কর, প্রথম প্রথম তোমাকে রাগে
শাসালেও পরে যখন আমি তোমারই হয়ে
গেলাম, তখন তোমার ভালোর জন্যই শাসন
করতাম।।
.
তোমাকে অনেকবার মনের কথাটা বলতে
চাইলেও বলতে পারিনি কখনো।। যখনই হ্রদয়ের
কথা বলতে গিয়েছি, তখনই আমার কৃতকর্মের কথা
মনে পড়ে যেত।।
.
তাই লজ্জায় বলতে পারিনি কিছুই।। কিন্তু সবসময়ই
মনে প্রাণে চাইতাম, তুমি যেন আজীবনই আমার
হও!!"
.
টানা এতটুকু বলে একটু দম নিল স্নিগ্ধা। তারপর আবার
বলতে শুরু করল,,,
"তাই তোমার আম্মুর সাথে পরিচিত হই। তুমি বাসায় না
থাকলে আমি প্রায়ই তোমাদের বাসায় যেতাম।।
তোমার আম্মুর সাথে গল্প করতাম। উনার কাজে
হেল্প করতাম।।
এভাবেই আস্তে আস্তে তোমাদের পরিবারের
ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। তোমাদের পরিবারের সবার
মন জয় করে নিলাম আস্তে আস্তে। এছাড়াও
আমার বান্ধবীরা তোমার আম্মুর কাছে আমার
অনেক প্রশংসা করত।।
.
এতে তোমার আম্মু আমাতে মুগ্ধ হয়ে
গেলেন।। একদিন তিনি শুনলেন যে, আমার জন্য
পাত্র দেখা হচ্ছে।। সেদিনই পরোক্ষভাবেই
তিনি বুঝাতে চাইলেন যে, "তিনি আমাকে এ ঘরের
বউ বানাতে চান!!"
.
আমি মৌন সম্মতি জানালাম।। কারণ আমি এটাই তো
চাচ্ছিলাম।।
.
তারপর থেকেই তোমার আম্মু তোমাকে
বিয়ে করানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে।।
.
আমি জানতাম, তোমাকে বললে তুমি কখনই রাজী
হতে চাইতে না।।
আমার মত দজ্জালীনীকে কে সারাজীবন কে
ই বা চিরসঙ্গী করতে চাইবে?? বলো!!
.
তারপরও তোমার থেকে জোর করে
ভালোবাসা আদায় করতে চেয়েছিলাম।। তাই
সেদিন তোমাকে 'পুতুল ফাঁস' এর ভয়
দেখিয়েছিলাম।
যাতে তোমার থেকে বিয়ের সম্মতি আদায়
করতে সুবিধে হয়। আর শাসন প্রক্রিয়া তো
অব্যহত ছিলই।।
.
কিন্তু এভাবে আর কতদিন বলো??
এভাবে তো আমি শুধু তোমাকেই
ভালোবেসে যেতে পারব, কিন্তু কখনোই
তোমার ভালোবাসা পাব না!!
তবে শুধু শুধু তোমাকে এত কষ্ট দিয়ে, এত কিছু
করে লাভ কি?? বলো!!
.
কাল রাতে অনেক ভেবেছি,,,,,,
আসলে মানুষের মনের ব্যাপারে জোর করা ঠিক
নয়।। কিন্তু তারপরও এতদিন তোমার উপর সেই
জোরই খাটিয়েছি আমি।।
.
ঠিক করেছি,,,,
এখন থেকে আর নয়।। তোমাকে অনেক কষ্ট
দিয়েছি, অনেক জ্বালিয়েছি।।
কিন্তু তোমার এই সুন্দর দ্বিতীয় জীবনটাতে
(বিবাহিত জীবন) আমাকে আমি চাই না, কষ্ট দিতে
চাই না আর।।
আমি তোমার যোগ্য না।
আর কখনো তোমার যোগ্য হতে পারব কিনা তা
জানিনা।।
.
তাই, আজ থেকে তোমাকে মুক্ত করে দিলাম
এই ডাইনী থেকে।
আজ থেকে তোমাকে আর জ্বালাবো না।
আর বকাবকি করব না।।
কখনোই শাসন করব না আর।
কিছুতেই কিছু আর বাধ্য করব না।।
সরে যাব তোমার জীবন থেকে।।
.
আর,,, আর তাই তোমাকে বিয়ে করব না।।
তোমার চিরসঙ্গী হবার সাধকে আজ থেকে মাটি
চাপা দিয়ে দিলাম।।
এখন থেকে তোমার জীবনে স্নিগ্ধা নামে
কেউ আর থাকবে না।!!"
.
.
এই বলে দাঁড়িয়ে গেল স্নিগ্ধা।। আর আমার
থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখে
বন্দী থাকা সব জল ছেড়ে দিল।।।
আমি শুধু ওর ফোঁপানোর শব্দ শুনছিলাম।।
.
কান্নাবস্থায় ও আবার বলে উঠল,,
"তুমি হয়ত ভাবছ, ওই চ্যালেঞ্জের জন্যই তোমায়
বিয়ে করতে চাচ্ছি আমি! তাই না!!!
তবে একটা কথা কি জানো??
আমি না,,,,,, আমি না সত্যিই তোমাকে খুব
ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি,, খুউউউবব।।
আমার হ্রদয়ে এর থেকে বেশী আর
ভালোবাসা নেই গো!!............... ভভালো
থেকো!!"
.
এই বলেই হনহন করে হেঁটে চলল স্নিগ্ধা!! আমি
একেবারে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম।। মাথা
একদম জমে গেল।।
কি করব কিছুই বুঝে আসছিল না।।
.
.
.
চলবে_____,,,,,,

No comments:

Post a Comment