Thursday, July 21, 2016

___স্নিগ্ধিত আকাশ___ (9th part/ last part)

___স্নিগ্ধিত আকাশ___
(9th part/ last part)
=======
হ্যাঁ, কয়েকদিন পর পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে
হয়ে গেল।।
হ্যাঁ, আমার ইচ্ছে অনুযায়ী ও এখনো আমাকে
শাসন করে।।
মিষ্টি ছোঁয়ায় মধুর শাসন।।
.
আমাদের বিবাহিত জীবন খুব সুখেই কাটছে।।
আমাদের মাঝে এখনো মিষ্টি ঝগড়া হয়।।
ও অভিমান করলে আমাকেই কান ধরতে হয়, ওর
অভিমান ভাঙ্গাতে।।
আর আমি অভিমান করলে ও' ও অভিমানে গাল
ফুলিয়ে থাকবে।।
তখন আমাকেই আবার সেই কান ধরা প্রক্রিয়ায় ওর
অভিমান ভাঙ্গাতে হয়।। সারাদিন দুষ্টুমী আর
খুঁনসুটিতেই কেটে যায় আমাদের সময়।।
.
আমি যেন ওর কাছে এখনো সেই ছোট্ট
বাবুটা।। আগের মতই ও'র ছায়ায় রাখে আমায়।।
কোমল স্পর্শে মোহময় করে তুলে আমার
সারাটা সময়।।
.
.
আচ্ছা! আপনাদেরকে আমি এগুলো বলছি কেন??
হাহ!!
আমাদের সুখের জীবন দেখে আপনাদের
নিশ্চয়ই ঈর্ষা হচ্ছে বুঝি,,,
তাই না!!!
.
হি.হি.হি... নাহ! আর কিছু বলা যাবে না। স্নিগ্ধার নিষেধ
আছে।।
আর হ্যাঁ! আপনাদেরকে যা' ই বলে ফেলেছি তা
কিন্তু আবার স্নিগ্ধাকে বলে দিয়েন না।।
কমপক্ষে ওর নামে যা যা বলেছি তা কিন্তু কিছুতেই
বলবেন না।।
নইলে কিন্তু বাসায় গেলে আমার উপর দিয়ে
পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ চলবে।।।
.
.
আচ্ছা! আপনারা না বলেছিলেন,
"যারা সিঙ্গেল আছে, তারাই নাকি বেঁচে আছে
আর যারা ডবল হয়ে গেছে তারা নাকি,..........
............"
.
এই না. না.... আমিই বলেছিলাম. তাই না!!!
হি.হি.হি ...
আসলে, ইয়ে মানে......
আমি একটু দুষ্টামী করেছিলাম আপনাদের সাথে।।
.
আসলে,,,
"যারা সিঙ্গেল আছে তারা তো এখনো জীবতই
হয়নি। যবে বিয়ে করবে তবেই না তারা পৃথিবীর
আলো দেখবে!!"
হি.হি.হি।
.
_@_
স্নিগ্ধা আমার বাবা মা'র কাছে আদর্শ বউ।। আর আমার
চির জীবনের সঙ্গীনী।।
.
ঘরের সব কাজ-কর্ম, বাবা মা' র সেবা... সবই ও নিজ
হাতে নিপুণভাবে করে।।
সারাদিন ঘরের মাঝে এক মিষ্টি ছোঁয়া বিরাজমান।।
আর সেটা স্নিগ্ধার আভায়ই ছড়ায়।।
.
হ্যাপি আকাশ!!
হ্যাপি স্নিগ্ধা!!
হ্যাপি বাবা মা!!
সুখী আমাদের পরিবার!!
.
.
বিয়ের কয়েকদিন পর...........
আজ সারাদিন শরীরের উপর দিয়ে অনেক ধকল
গেছে।। একদম ক্লান্ত আমি।
বাসায় আসতেও দেরী হয়ে গেছে।। জানি,
স্নিগ্ধা খুব রেগে আছে।। অভিমানে গাল ফুলিয়ে
আছে আমার উপর!
অনেকবার ফোন করেছিল, কিন্তু ইচ্ছে করেই
রিসিভ করিনি।।
কিন্তু তখনো ভাবিনি যে বাসায় গেলে কি অবস্থা
হবে আমার!!
.
দুরু দুরু বুক নিয়ে দরজায় টোকা দিলাম।। টোকার
শব্দ হতেই দরজা খুলে গেল।। যেন আগে
থেকেই আমার অপেক্ষাতেই ছিল স্নিগ্ধা!
.
ঘরে ঢুকে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, যা
ভেবেছিলাম তাই!!!
রেগে আগুন হয়ে আছে ও! অভিমানে গাল
ফুলে টকটকে লাল টমেটোর রং ধারণ
করেছে।।
ওর অগ্নিচক্ষু দেখে ভয়ে কোনমতে গা
বাচিয়ে তাড়াতাড়ি যেই না যেতে চাইলাম,,
অমনি ও খপ করে আমার হাতটা ধরে বলল,,
"আজ দেখাবো মজা!! ফোন ধর নি কেন?? আর
দেরী করে আসলে কেন?? হুম....
যাও! এক্ষুণি ফ্রেশ হয়ে আস.. খাবার খাব. প্রচন্ড
ক্ষিধে লেগেছে।। সাহেবের তো আর
আমার প্রতি কোন চিন্তা নেই!!
এখনো যে খাইনি, রাত যে কয়টা বাজে,,, সেটাও
হয়ত উনার খেয়ালও নেই!"
.
আমি চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে চলে এলাম।! আজ খাওয়ার
পর আমার অবস্থা নিশ্চিত টাইট হবে।।
কি করা যায়??
.
হ্যাঁ, বুদ্ধি পেয়েছি!! চুপচাপ শুয়ে পড়ি।। আজ
খেতেই যাব না!!
.
যেই ভাবা সেই কাজ।! বেডরুমে এসে কাঁথাটা
ভালো করে মুড়ে শুয়ে পড়লাম।।
.
আমার দেরী দেখে একটু পড়েই স্নিগ্ধা এসে
ডাকাডাকি শুরু করল,,,
আমার চোখে তখন রাজ্যের ঘুম এসে ভর
করেছে।।
.
ডাকাডাকির পর আমি না উঠাতে কাঁথা টেনে উঠিয়ে
ফেলল স্নিগ্ধা!!
পিঠের উপর ধুম ধাম কিল ঘুষি পড়তে লাগল!!
.
কত ডাকাডাকি আর টানাটানি করল স্নিগ্ধা!!
কিন্তু কে শুনে কার কথা!!
ক্লান্তের রাজ্যে ঘুম এসে ভর করলে কি আর
ঠিক থাকা যায়!!!
.
.
_@_
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল আমার!
অনুভব করলাম,,,
কারো কোমল ছোঁয়া আমার আষ্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে আছে!!
.
ভালোভাবে চোখ মেলতেই দেখলাম,,,,
স্নিগ্ধা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে।।
চুলগুলো এলোমেলোভাবে আমার মুখে
ছড়িয়ে আছে।।
আলতো বাতাসের ছোঁয়ায় কয়েকটা চুল
উড়োউড়ি করছে।।
জানালার ফাঁক বেয়ে জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো
সিক্ত করে দিচ্ছে আমাদের দুজনকে।।
.
চাঁদের ক্ষণ মিষ্টি আভায় স্নিগ্ধাকে স্ফুটিত
গোলাপের মতই লাগছে।।
অপরূপ কোন অপ্সরী যেন স্বর্গ থেকে
নেমে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে।।
.
.
এত মায়াবী দর্শণের পরও স্নিগ্ধার মুখটা কিছুটা
শুকনো শুকনো লাগছে।।
বুঝলাম, রাতে আর খাবার খায়নি ও।।
.
ধ্যাৎৎ! এমন করলাম কেন??
খাবারটা খেয়েই ঘুমাতাম!!
আর আমি না খেলে তো ও কখনোই খাবে
না।।
একটু বকাবকি করলে এমন কি'ই বা হত!!
আমার ই তো দোষ!!
এক তো দেরী করেছি তার উপর আবার
ফোনটাও ধরিনি!!
উফফফ..
আর ও আমাকে শাসন না করলে আর কে'ই বা ঠিক
করে রাখবে আমায়!!
ধ্যাৎৎ! আমার কারণেই আজ ও না খেয়ে থাকল।।
.
আজ কতই না কষ্ট দিলাম ওকে!!
দেরী করে এসেছি,
তাতে কখন থেকেই না যেন আমার অপেক্ষায়
ছিল!!
ফোন রিসিভ করিনি,,
তাতে কতই না যেন চিন্তা করেছে ও!!!
আবার আমার না খাওয়াতে ও রাতের খাবারটাও খেল
না!!
ধ্যাৎৎৎ!!
.
গাল বেয়ে জলের রেখা দেখে বুঝলাম.,,
রাতের অভিমানের ধকলটা আমার বুকে এসেই
ঝেড়েছে ও!!
গালে টোপ পড়ে আছে!!
মেয়েরা হাসলে তাদের গালে টোপ
পড়লেও,,,, ও কাঁদলে ওর গালে টোপ পড়ে।।
আর এ জন্যই আমার স্নিগ্ধা সবার থেকে আলাদা!!
.
মনে মনে ভাবলাম,,
এত শাসন, এত রাগারাগীর বদলে যদি এমন একটু
শীতল স্পর্শ চিরজীবনের সঙ্গী হয়,,
আগলে রাগে যদি মায়ার ছায়ায়,,,
তবে সেই দাজ্জালীনী কে চিরসাথী করে
রাখতে দোষ কি???
তাই না!!!
.
.
.
________সমাপ্ত_________

No comments:

Post a Comment