Thursday, July 21, 2016

"বিয়ে বিভ্রান্তি"

"বিয়ে বিভ্রান্তি "

এক.
একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে আমার
সাথে।তাও আবার একই মানুষের জন্য!
আগের গুলো দম ধরে মেনেনিলেও
এটা কিছুতেই মেনে নিতে
পারছিনা।কিন্তু কিছুই করার নেই।
আমি নিরুপায়।আমাকে চুপচাপ সহ্য
করতেই হচ্ছে।রাগে,দুঃখ
ে,ক্ষোভে,জিদে আমার ইচ্ছে করছে
চিৎকার করে কাঁদি।কিন্তু আম্মুর ভয়ে
কান্নাটাও কোথায় যেন আটকে
আছে।আমি ভাবতে পারছিনা এই
দুর্ঘটনার কথা প্রতিবছর ঠিক এইদিনে
আমার মনে পড়বে আর আমি ঘটা করে
এটা উদযাপন করবো?কিভাবে সম্ভব?
.
আমি বিছানার উপর বসে আছি।
মামাতো আর খালাতো বোনরা
আমার মুখে সস্তা আটা ময়দা মাখিয়ে
আমাকে পেত্নী বানাতে ব্যাস্ত।
মামাতো বোন তানিয়া আমার
হাতে চুড়ি পড়িয়ে বললো
-আমার ভাইতো মনে হয় মীমরে বিয়ে
করে ঠকবে।ওর শরীরে তো হাড্ডি
ছাড়া কিচ্ছু নেই।চুড়ি তো মনে হয় ওর
গলায় আটবে।কিরে খাস না কিছু?
আমাদের ঘরে আসলে দেখিস তোরে
খাওয়াইয়া ফুলিয়ে ফেলবো।
.
এহহ, হবু ননদীনির কথার ধরন দেখছো!
আমাকে বিয়ে করে নাকি তার ভাই
ঠকবে?আরে আমিইতো তোমাদের
ভাইয়ের ইজ্জত বাচাইতেছি আর বলে
কিনা!শয়তানের শয়তান কতোগুলা।
পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিতে ইচ্ছে
করছে তোমার ভাইকে।বলদ পোলা!
তোর কি আক্কেল জ্ঞান নেই?বিয়ের
আগে ভালো করে জেনে নিবিনা
বউয়ের সম্পর্কে?জেনে নিসনি
ভালো কথা তাই বলে দেখেও
নিবিনা!তুই কি এইটা মেয়ে মানুষ
বিয়ে করতেছিলি নাকি কোন
হাতি?ব্লাউজটা এতো ঢিলা যে
কয়েকটা সেফটিপিন লাগিয়ে আমার
গায়ে ফিটিং করতে হয়েছে।আর
চুড়িগুলো হাত থেকে খুলে যাওয়ার
অবস্থা।আর আমার কাজিন সিস্টার
গুলা!এক একটা হাইব্রিড।কোন গুদামের
চাল খায় আল্লাহই জানে।ফিগার তো
না যেন আচারের বয়ম।এবার এই চাল
খেয়ে আমিও বয়ম হয়ে যাবো ভাবতেই
আমার কলিজা শুকিয়ে আসছিলো।
.
গত কিছুদিন ধরেই আম্মু ফোন করে করে
বলছেন তার একমাত্র ভাইপো
তানজীমের বিয়েতে আমাকে
আসতেই হবে।কিন্তু কোন এক না না
কোন দুই তিন কারণে (কারণগুলো পরে
বলছি) তানজীমের সাথে আমার
সাপে নেউলে সম্পর্ক তাই আমি
পরীক্ষার বাহানা দিয়ে আম্মুকে না
করে দিয়েছি।আম্মু আবার পড়াশোনার
ব্যাপারে কোন আপোষ করেননা।তার
মতে আগে পড়াশোনা তারপর বাকি
সব।আম্মু আমাকে বলেছে আমি যদি
সারাজীবন পড়তেও চাই তাও তিনি
আমায় পড়াবেন।মূলত প্রচুর আগ্রহ থাকা
সত্বেও আম্মু নিজে খুব বেশি পড়তে
পারেননি বলেই আমাকে এতো
পড়াচ্ছেন।আম্মু একটু বেশি সুন্দর
ছিলোতো তাই এসএসসি পার করতে
না করতেই উনাকে বিয়ের পিড়িতে
বসতে হয়েছে।
.
অনেক দিন পর আজ আবার ছোটবেলার
কথাগুলো ভাবার সময় পেয়েছি।
মাঝে মধ্যে মনে আসতে চাইলেও
আমি অন্য কিছু ভেবে এই ঘটনা গুলো
ভুলে যেতাম।
.
ছোটবেলায় মামাবাড়িতেই বেশী
থাকতাম আমি।এর অবশ্য কারণও ছিলো।
কারণ টা ছিলো তানজীম।উঠতে,বসত
ে,খেতে,ঘুমাতে,গোসল করতে
যেখানে যাই সেখানেই শুধু তানজু
তানজু করতাম।তানজু ছাড়া কিছুই
বুঝতাম না।আর কারও সাথে খেলতামও
না।তানজীম ওর বয়সী ছেলেদের
সাথে খেলতে চাইলে আমি দিতাম
না।আমি চাইতাম ও সবসময় আমার
সাথেই খেলবে।ও আমার চাইতে বয়সে
পাঁচবছরের বড় হলেও একে অপরকে তুই
করেই বলতাম।
.
আমি তখন ক্লাস টুতে আর তামজীম
সিক্সে।বিকেলে বর বউ খেলছিলাম
দুজন মিলে।তানজীমকে পাঠালাম
বাজার করে আনতে।আসতে দেরী
হচ্ছিলো দেখে রাস্তার দিকে
তানজীমকে খুঁজতে এসে দেখি ও
ফারিহা মেয়েটার সাথে কুতকুত
মানে এক্কা দোক্কা খেলছে।দেখেই
আমার চোখ কপালে উঠলো।ওকে
টেনে নিয়ে আসলাম।
-তুই ওর লগে খেলতেছিস ক্যান?
- তো কি হইছে?
-কি হইছে মানে?তুই আমার জামাই,তুই
ওর লগে খেলবি কেন?
-তুইতো পিচ্চি
-আমি পিচ্চি?আর ফারিহা অনেক বড়?
যা তুই ফারিহারে বিয়া কর।তুই আর
কোনদিন আমার লগে কথা কইবিনা
.
কাদামাটি দিয়ে বানানো
হাঁড়ি,পাতিল আর ফুল,পাতা সব এনে
পুকুরের পানিতে ফেলে দিলাম।ঘরে
এসে বিটিভিতে ছবি দেখছিলাম।
তানজীম আমার দৌড়ে এসে আমার
পাশে বসলো
-মীম?
আমিচুপ।তানজীম আবার বললো
-ডিম?
-তুই ডিম
-আমি ডিমের জামাই
-তুই আমার জামাই না
-তাইলে তুই আমার বউ
-যা কুত্তা
-তুই তাইলে কুত্তার বউ,কুত্তি।মীম মীম
ডিম ডিম মীম শোন না শোন,আমার
দিকে তাকানা।দ্যাখ তোর জন্য কি
আনছি?
-কি আনছস?
বলে তানজীমের দিকে তাকাতেই ও
আমার গালে উম্মা দিলো।আম্মুর বলা
উপদেশ বানীগুলো মনে পড়ার সাথে
সাথেই আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে
দিলাম।
-তানজীম্মা তুই আমারে চুম্মা দিছস
ক্যান?
-তুই আমার বউযে
-আমি আম্মুর কাছে বইলা দিমু আম্মুউউউ।
-আরেহ নাহ,মাফ চাই তোর
কাছে,ছোটফুফিরে বলিস না।আমারে
মাইর দিবো তাইলে।
-তাইলে আমি তোরে তালাক দিমু
-তুই তালাক দিতে পারোস?
-আমি টিভিতে দেখছি।এই দ্যাখ
এমনে দেয়।এক তালাক দুই তালাক তিন
তালাক,চাইর তালাক,পাঁচ তালাক,দশ
তালাক,একশো তালাক
.
হঠাৎ হেসে উঠলাম।কি পাগলটাই না
ছিলাম।তানজীমের
গায়ে হলুদের রাতে কেন জানি ঘুম
আসছিলোনা আমার।তানজীম
শয়তানটার বউ কেমন সুন্দরী হয় সেটা
দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো।
.
দুই…
সকাল এগারোটার দিকে আমি মামা
বাড়ি পৌঁছালাম।প্রায় ছয়বছর পর
মামাবাড়িতে আসলাম।ভাগ্য ভালো
গত বছরগুলোতে নানা নানী বা এ
বাড়ির কেউই পরলোক গমন করেনি।
নাহলে তাদের মরদেহ দেখতে হলেও
তো আসতে হতো আর তানজীমের
মুখোমুখি হতে হতো।কি ব্যাপার!
বাড়ি এতো সুনসান এতো নীরব কেন?
বিয়ে বাড়ি বলে মনেই হচ্ছেনা মনে
হচ্ছে যেন মরা বাড়ি।বুকটা কেমন
কেঁপে উঠলো।কেউ মারা যায়নিতো?
কিন্তু কেউ মারা গেলেতো বাড়ির
একশো হাত দূরে থেকে বিলাপ করে
কান্নার শব্দ শুনতে পেতাম অথচ কোন
কান্নার শব্দ পাচ্ছিনা কেন?
.
আমি এ বাড়িতে এসেছি সেদিকে
কারও খেয়ালই নেই।আমাকে দেখেও
কেউ যেন পাত্তাই দিচ্ছেনা।
কাহিনী কি?আমি ভেবেছিলাম
এতো বছর পর এসেছি,তাও আবার
ঢাকায় থাকি,সবাই আমাকে দেখে
দৌড়ে এসে নিশ্চয়ই বলবে "বাহ!তুই তো
আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছিস!
চুলে কি কাট দিছিস?পার্লার থেকে
কাটাইছিস?তোর ফিগার তো অনেক
সুন্দর,পুরা হিন্দি নায়িকাদের মতো"
কিন্তু কিয়ের ভেতর কি?
.
উঠোনের এক কোণে দেখলাম আব্বু আর
বড় মামা দাড়িয়ে আছেন।আমি গিয়ে
সালাম দিলাম উনাদেরকে।বড়মামা
আমাকে দেখে প্রতিবারের মতো
হাসলেননা।আশ্চর্যের বিষয়!আব্বুকে
চোখের ইশারা করে জানতে চাইলাম
ঘটনা কি?আব্বুর চোখের ইশারা বুঝতে
আমি ব্যর্থ হলাম।
"তোমার বড় মামীর সাথে গিয়ে
দেখা করো।" আম্মু এসে কথাটা
বললেন।
.
রুমে গিয়ে দেখলাম বড় মামী
বিছানায় শুয়ে আছেন আর তার মাথায়
পানি ঢালা হচ্ছে।তানিকাওয়া
কাকে যেন ফোন করে বললো
ডাক্তারকে খবর দিতে,মামীকে
স্যালাইন লাগাতে হবে।আমার
মাথায় তড়াক করে একটা ভাবনার উদয়
হলো।তানজীম বিয়ে না করে
পালিয়ে যায়নিতো?
.
"বড় মামী" বলে উনার পাশে বসে ডাক
দিতেই উনি হুড়মুড় করে উঠে বসে
আমাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ শুরু
করলেন "ওরে মারে,আমার ছেলের কি
হইবোরে?আমার এতো ভালো সহজ সরল
ছেলেটার সাথে এমন হইলো কেন রে?"
.
মামীর মুখে তানজীমের এমন প্রশংসা
শুনে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না!
ছোটবেলায় দুষ্টুমি বান্দরামীর জন্য
মামীর হাতে তানজীম যে কি
পরিমাণ প্যাদানি খেয়েছে তা
আমি আজও ভুলতে পারিনি।আজকে
রাতে নতুন বউ সিওর তানজীমের
গায়ে সেই মাইরের দাগগুলো দেখতে
পাবে।কিন্তু হঠাৎ মামীর মুখে
তানজীমের এতো প্রশংসা!হুমম,বড়
হওয়ার পর তানজীম মনে হয় আসলেই ভদ্র
হয়ে গেছে।কিন্তু ঘটনা তো এখনো
কিছুই বুঝতে পারছিনা।মামীকে বুকে
জড়িয়ে কথা গুলো ভাবছি আর মামীর
চুলের পানিতে আমার জামা ভিজে
জবুথবু হয়ে গেছে।
.
বাড়ির কেউ কেউ এর মধ্যে আমার
সাথে কথা বলেছে।সবার কাছ
থেকেই একটা কমন কথা শুনতে হয়েছে "
কিরে ঢাকায় গিয়ে তোর শরীরের এই
অবস্থা হলো কেন?ওখানে কি ভাত
নাই?আমরা শুনছি ঢাকায় গেলে মানুষ
মোটা হয় আর তুই কিনা হয়ে গেলি
শুকনা কাঠ!এই শরীর নিয়ে জামাই
পাবি নাতো।" আমি উত্তরে বলতাম
"তোমাদের জামাই গুলা তোমাদের
সাথে ঘুমায় ক্যামনে?মানে রাতে
হঠাৎ ঘুম ভাঙলে তোমাদের দৈত্য
মার্কা শরীর দেখে চিল্লায় উঠেনা?
এইটা শরীর নাকি চর্বির ফ্যাক্টরি?
বেশিদিন বাঁচবানাতো!এখনো সময়
আছে,খাওয়া দাওয়া কমিয়ে শরীর
ঠিক করো!"
.
এতক্ষণ হয়ে গেছে অথচ তানজীম কে
একবারও দেখলাম না।কেমন দেখতে
হয়েছে আল্লাহই জানে।কোথায় আছে
সে?আহারে! লজ্জায় বেচারা মনে হয়
ঘর থেকেই বের হতে পারছেনা।
যাই,ওকে একটু খোঁচা মেরে আসি।
যাকে বলে কাটা ঘায়ে নুনের
ছিটা।
.
দরজায় দাড়িয়ে দেখলাম তানজীম
ড্রেসিং টেবিলের সামনে
দাড়িয়ে শার্টের হাতা গুটাচ্ছে।
আমার দেখা এই একমাত্র ছেলে যে
নিজেকে বারবার আয়নায় দেখতে
ভালোবাসে।আমি চুপচাপ গিয়ে ওর
বিছানায় বসে পা দুলাতে লাগলাম।
বিয়ের পাঞ্জাবি আর শেরওয়ানি টা
বিছানার উপরই পড়ে আছে।আমাকে
দেখেও না দেখার ভান করলো!
এহহ,ভাব দেখো তার!যেন কিছুই হয়নি!
নির্লজ্জ একটা।দাড়া,তোর ফুটানি
বাইর করতেছি।
-হাই,কি খবর?(কিছুটা হেসে হেসে
বললাম)
-এইতো ভালোই (ভালোই!চাপাবাজ
কোথাকার।তোর মনে যে এখন দাউ
দাউ করে আগুন জ্বলছে তা আমি জানি)
-অভিনন্দন
-কিসের জন্য?
-এইযে আজকে তোমার বিয়ে,তুমি নতুন
জীবন শুরু করতে যাচ্ছো তাই।
.
এমন ভাবে কথা বললাম যেন আমি
এখনো ঘটনার কিছুই জানিনা।আর
তানজীম ও তাই ধরে নিয়েছে।অবাক
করার মতো ব্যাপার হলো আমি
তানজীমকে তুমি করে বলছি।সম্ভবত
দুজনেই বড় হয়ে গিয়েছি বলে এখন তুই
করে বলাটা শোভা পায়না তাই
আমার মুখ দিয়ে তুমি সম্বোধনটাই বের
হলো।তানজীম হেসে বললো
- থ্যাংক ইউ
-তা তোমার বউ দেখতে কেমন?
-বউ?এখনো তো বিয়েই হয়নি।বিয়ে
না হওয়া পর্যন্ত বউ বলা কি ঠিক হবে?
.
পোলা দেখি বহুত স্মার্ট!আমার সাথে
এইরকম একটা ঘটনা ঘটলেতো আমি
বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতাম আর ও কিনা
খুব স্ট্রং ভাবেই আমার সাথে কথা
বলছে।সৃষ্টি কর্তা এমন কেন করলেন?
শারীরিক মানসিক দুইদিক দিয়েই কেন
ছেলেদেরকে বেশী শক্তি দান
করেছেন?
.
"মীম,তুই এখানে?যাক ভালোই হলো
তোরা দুইজন একসাথে আছিস।
তানজু,বাবা তুই পাঞ্জাবিটা আবার
কষ্ট করে পরে নে।আর মীম তুই আমার
সাথে আয়।"
.
আম্মুর কথা শুনে মনে হচ্ছে উনি খুব
তাড়াহুড়োয় আছেন।আমি বললাম
-তানজীমের বউ কি ফিরে এসেছে?
.
তানজীমের দিকে তাকিয়ে
দেখলাম ও এদিক ওদিক চোখ ঘুরাচ্ছে।
যাক,এতক্ষণে খোঁচাটা জায়গা মতো
লেগেছে।আম্মুকে মনে মনে থ্যাঙ্কস
দিলাম এই সময়ে আসার জন্য।কিন্তু আমি
কি জানতাম আম্মু আমার জন্য এইরকম
একটা দুঃসংবাদ নিয়ে আসবেন?আম্মু
বললেন
-নাহ,ওই মেয়ের কোন খোঁজ পাওয়া
যায়নি।
-তাহলে কি অন্য কোন মেয়ে
তানজীমের বিপদের দিনে ওকে
বিয়ে করতে রাজি হয়েছে?বাহ,পুরাই
ফিল্মি কাহিনী।কে সেই মহিয়সী
নারী?আমি তাকে দেখতে চাই।
.
তানজীম আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত
কটমট করে বললো
-ছোটফুফি,মীম এতো বেশী কথা বলে
কেন?আরএখন যেই মেয়েই রাজি হউক
না কেন আমি আর বিয়ে টিয়ে
করছিনা।বাদ দেন তো এইসব বিয়ের
ব্যাপার স্যাপার।আমি কি মেয়ে
নাকি যে আজকেই আমার বিয়ে
করতেই হবে?আমি বিকেলেই ঢাকায়
চলে যাবো।
তানজীমের কথা শুনে আম্মু আমার উপর
রেগে গেলেন।
-মীম,তুই এতো বেশি কথা বলিস যে…
যাইহোক এতো কথা বলার টাইম নেই।
তানজিম তুই রেডি হয়ে নে,বাপ
আমার।মীম তুইও তাড়াতাড়ি রেডি
হয়ে নে
-আম্মু আমি কেন রেডি হবো?আমি তো
রেডিই।আমার এই জামাটা আজকেই
প্রথম পড়লাম,আর সাজুগুজু ও তো করা
আছে অলরেডি।
-বিয়ের দিন কোন মেয়েকে থ্রিপিস
পড়তে দেখছিস তুই?
-ওমা তুমি এইসব কি বলতেছো?আম্মু
তোমার সুগার বেড়ে যায়নিতো?
উল্টা পাল্টা কি বলছো?বিয়ের দিন
মেয়েরা কি পড়ে?
-আমার কপাল খারাপ যে আমার ঘরে
একটা গাধী মেয়ে আছে।গাধী
মাইয়া তানজীমের সাথে তোর
বিয়ে হবে।
-কিইইইইইইইইইইইইইইইই?
.
আমি আর তানজীম দুজনেই একসাথে
বলে উঠলাম।আমি হেসে বললাম
-ডিয়ার সুইট মম,ইউ মাস্ট বি জোকিং
- এইটা মজা করার সময়?তোর কি মনে হয়
আমি মজা করার মুডে আছি?যা
বলেছি তাই হবে।তোর আর
তানজীমের আজকেই বিয়ে হবে।এটাই
শেষ কথা।
আম্মু যখন বলছে শেষ কথা তখন ধরে
নিতেই হবে এই বিয়ে আটকানো সম্ভব
না।তবুও চেষ্টা করলাম
-কিন্তু আম্মা আমার তো কালকে
পরীক্ষা।আমি বিকেলেই ঢাকায়
ফিরে যাবো
- পরীক্ষা পরেও দেওয়া যাবে।
সেমিস্টার ড্রপ দিবি দরকার হলে।
-না হবেনা।আমি ড্রপ দিবোনা।ড্রপ
দেয়া পরের কথা আমি তানজীমকে
বিয়ে করবোনা এটাই হলো আসল কথা।
আমাদের মা মেয়ের কথার মধ্যে
তানজীম বাঁ হাত ঢুকিয়ে দিলো
-ফুপিআমি একটা কথা বলি?
আমি চেঁচিয়ে বললাম
-তুমি কোন কথা বলবানা।বদের বদ।বলদ
একটা।বিয়ের আগে মেয়েটাকে
জিজ্ঞেস করোনি কেন যে তার
বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা?বিয়ে ঠিক
হওয়ার পর এতদিন কি আন্ডা
পাড়ছিলা?তার সাথে কথা বলার সময়
বুঝোনাই যে তার বয়ফ্রেন্ড আছে?
তোমার মতো শয়তানের সাথে এমনই
হওয়া উচিৎ।তোমাকে কোন মেয়েই
বিয়ে করবেনা।সবাই গায়ে হলুদের
রাতে পালিয়ে যাবে,বুঝছো?আর
আমি তো তোমাকে জীবনেও বিয়ে
করবোনা।আমি এক্ষুনি ঢাকায় যাচ্ছি।
আমার কথা শুনে তানজীম ঘর থেকে
বেরিয়ে গেলো।আম্মু আমার কাছে
এসে আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে
বললেন
-এই মেয়ে তুই এভাবে কথা বলছিস
কেন?একটা থাপ্পড় দিবো তোকে।
এমনিতেই ছেলেটার মন ভালো নেই
তার উপর তুই ওকে খোঁচা মেরে কথা
বলছিস?তাও আবার আমার সামনে?
-আমি বুঝতেছিনা ওর ভুলের জন্য
আমাকে কেন বলি হতে হবে?
-ওর ভুলের জন্য না।ভুলটা আমারই।আমিই
ওর জন্য এই মেয়ে দেখেছিলাম।আমি
যদি জানতাম এই মেয়ে তলে তলে
এইরকম তাহলে…এখন তোর মামা
মামীকে আমি মুখ দেখাবো কি করে?
-কিন্তু তোমার ভুলের জন্য আমাকে
কেন মাশুল গুনতে হবে?আমি ওকে
কিছুতেই বিয়ে করবোনা
-কেন করবিনা?
-কা কা কারণ আমি বিয়ের জন্য
মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড না।
-আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
-ঠিক হবেনা।তুমি জানোনা ওর সাথে
আমার ক্লাস এইট থেকেই ঝগড়া?
-বিয়ে হলে ঝগড়া ঝাঁটি ভুলে যাবি।
আমি আর কোন কথা শুনতে চাইনা।
বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল
-আচ্ছা ঠিক আছে,আমি রাজি।কিন্তু
আম্মু আমার ফ্রেন্ডসরা অনেক শখ
করেছিলো আমার বিয়েতে এসে
অনেক হৈ চৈ করবে।বিয়েটা একমাস
পিঁছিয়ে দিলে হয়না?
-ওরে চুন্নি মাইয়া,তোরে আমি
চিনিনা?তুই এইটা বলে পালাতে চাস
তাইনা?তোর বন্ধুদেরকে ওখানে কিছু
খাইয়ে দিস,আমি টাকা দিবো
তোকে।
-আম্মুউউউউউ
-লক্ষী মেয়ে আমার চল তাড়াতাড়ি
চল।
.
আমি শেষ।মানে পুরোই শেষ।চোখে
একটু আশা নিয়ে আব্বুর দিকে
তাকালাম কিন্তু আব্বুও মাথা নেড়ে
জানালেন উনিও কিছুই করতে
পারবেনা।আম্মুর মুখের উপর কথা বলার
সাহস কেউই দেখায়না।ভাইবোন দের
মধ্যে সবার ছোট হলেও সবাই আম্মুর
কথায় উঠে বসে।ছোটবেলা থেকেই
তিনি নাকি একটু বেশিই জেদি।
.
সবাই আমার দিকে এমন ভাবে
তাকাচ্ছে যেন এই প্রথম বার আমাকে
দেখছে ।মামাতো বোন তানিয়া
এসে বললো " তুই তো আমার ভাবী হয়ে
গেলি।নাম ধরে ডাকলে প্রবলেম
হবে?নাকি ভাবীই ডাকতে হবে?"।
আমি কিছুনা বলে বিদ্রুপ মার্কা
হাসি দিলাম একটা।আর আটকে
রাখতে পারলাম না নিজেকে।কবুল
বলার সাথে সাথেই আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ
করে কান্না শুরু করে দিলাম।কি আশ্চর্য!
আমি ছাড়া আর কেউই কাঁদছেনা!
কিরে ভাই?তোমাদের কারও কাছে
কি এটা বিয়ে বলে মনে হচ্ছেনা?
কনে বিদায়ের অংশ হিসেবেও তো
কাঁদা উচিৎ সবার।মামীকে জড়িয়ে
ধরে "মামীইইইইই"বলে কাঁদতে
লাগলাম।তানিয়া এসে বললো
"মামীকে ধরে কাঁদার কি আছে?এখন
থেকে তো মামীর কাছেই থাকবি।"
.
তিন…
আজ সারাদিন বাঁশ হজম করার পর রাতে
এসেও বাঁশের তৈরী ঘরেই আমার
স্থান হয়েছে।বাঁশময় জীবন।নানা
নানী মিস্টার বাঁশকে ধরে এনে
আমার পাশে বসালেন।নানী
নানাকে বললেন
-আফনের ছোট গিন্নিতো আফনের
নাতীর হয়ে গেলো আজ থেইকা
-তুমি মনে হয় খুশি হইলা?আমার নাতী
বিয়ে করলে কি আর আমি করলে কি।
বউতো আমার ঘরেই থাকবো
.
আমি নানার দিকে তাকিয়ে নাক
কেঁদে বললাম
-এর থেকে তোমার সাথে বিয়ে
হলেও মানতে পারতাম কিন্তু এই
তানজীম্মার লগে।
-ওই তানজীম্মা কিরে?অভদ্র মেয়ে।
জীবনটা তামা তামা করে দিলো
আমার।মনটা চাচ্ছে একটা ধরে দেই
-নানা দেখছেন?আপনার সামনে
আমাকে মারবে বলছে?
-দাদা আপনে দাদীরে নিয়ে এই ঘরে
থাকেন আজকে।আজকে আপনার বাসর
রাত।
নানা বললেন
-ভাই তোর বউ,তোর বাসর, সব তোর।
তোর বউ তুই সামলা।আমরা গেলাম
এখান থেইকা।
উনারা বের হওয়ার সময় বললাম
-ও নানা,কই যান আমাকে একা রেখে?
তানজীমকে নিয়ে যান আপনাদের
সাথে।নানুগোওওও
-নানুগোওও,ঢং।আমাকে কেন নিয়ে
যাবে?এটা আমার রুম।তোমার না
থাকতে ইচ্ছে হলে তুমি যাও
-আমি যাবোনা,আম্মু জানতে পারলে
আমার খবর আছে
- হাহাহাহা হোহোহোহো
হেহেহেহেহ
-হাসো কেন পাগলের মতো?মাথার
তার ছিড়ে গেছে নাকি?লজ্জা
করেনা তোমার?বিয়ের দিন বউ
আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে
তাও তুমি হাসতেছো?
- বাদ দাও,অনেক নাটক হইছে।এখন আর
সামনে কেউ নেই।
-নেই তো কি হইছে?বলা তো যায়না
কে কোন দিক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে?
-দিলে দিক।বিয়ে হয়ে গেছে যখন তখন
আর চিন্তা কি?বাপরে বাপ!মহা
টেনশনে ছিলাম আজকে সারাদিন।
কি ধকলটাই না গেলো আমার উপর।এখন
ঘুম আসতেছে অনেক।
-তোমার উপর ধকল গেছে মানে?তুমি
তো কিছুই করোনাই।সব তো আমাকেই
করতে হয়েছে।আমি যদি আসতে আর
একটু দেরী করতাম তাইলে তো আম্মু
তোমারে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে
দিয়ে দিতো
-আসলেই মীম,কি খেল টাই না
দেখাইলা।সিরিয়ালের নায়িকা
গুলা তোমার কাছে ফেইল।ফুপির
সামনে কিভাবে এতো নাটক করলা?
তোমার কথা শুনে আমি হাসি আটকে
রাখতে পারছিলাম না বলেই ওইসময়
ফুপির সামনে থেকে চলে
গিয়েছিলাম।হ্যাটস অফ টু ইউ।
.
খুব খারাপ লাগছিলো।কিন্তু কিছুই
করার ছিলোনা।আমার আম্মু ঘোরতর
প্রেম বিরোধী।প্রেম নামক অপরাধের
শাস্তি দিতে তিনি কোন কার্পণ্য
করেননা।ভালোবেসে বিয়ে করার
অপরাধে গত দশ বছরে দেখা তো দূরে
থাক একবারের জন্যও আমার বড় আপুর
নামও উচ্চারণ করেননি।
-তানজু?
-হুম
-আম্মু যদি কখনো টের পায় যে
আমাদের সম্পর্ক ছিলো আর আমরাই
প্ল্যান করে ওই মেয়েকে পালিয়ে
যেতে সাহায্য করছি?
-তো?
--তো মানে?যদি কোনদিন জানতে
পারে তাইলে উনার সাথে চিটিং
করার অপরাধে ডিভোর্স করিয়ে
দিবে আমাদের।খালি ডিভোর্স না
মেরেই ফেলবেন
--এহহ,ডিভোর্স?মগের মুল্লুক নাকি?আর
জানতে পারলে মাফ চেয়ে নিবো।
চিন্তা কইরোনাতো,কক্ষনো কেউই
জানবেনা।আমি তো তোমাকে
নিয়ে ভয়ে আছি?
--আমাকে নিয়ে কিসের ভয়?আমি
যদি কাউকে মুখ ফসকে বলে দেই?বা
আমার আচরণে যদি কেউ টের পেয়ে
যায়?শোনো তানজু আমার কারণেই এই
বিয়েটা হইছে।তুমিতো কচুটাও অভিনয়
করতে পারোনা।তোমার কারণে ধরা
পড়ে যাবো এই ভয়ে সেই ক্লাস এইট
থেকে আমি তোমাদের বাড়িতে
আসিনা।বাড়ির সবাই জানে তোমার
সাথে আমার ঝগড়া।
--আমি সেটা বলিনি।আমি বলছি
চুম্মা দেয়ার অপরাধে যদি আবার…
তোমাকে বিশ্বাস নাই!পিচ্চিকালে
একবার ডিভোর্স দিছিলা।এই ভয়ে
এতোদিন আর ভুলেও তোমারে চুম্মা
দেইনাই।খালি তুমিই আমারে দিছো
-ভালো করছি
-আজকে আমি দিবওওওও।
-সরি তানজীম ভাইয়া
- না দিতে দিলে ফুপিকে গিয়ে সব
বলে দিবো।ফুপিইই
- এই চুপ চুপ
- জান ও বেবী সোনা ময়না
পাখি,তাড়াতাড়ি তুমি আমার বুকে
চলে আসো
- যা কুত্তা
- তুই যা কুত্তি।নাহ,যাইস না,তুই আয়
কুত্তি
-আসবোনা
-ওখেএএ…আমিই আসতেছি তাইলে।
.
রান্নাঘরে যাওয়ার সময় আম্মুর গলা
শুনতে পেলাম।চুপি চুপি বারান্দায়
দরজায় দাড়িয়ে দেখলাম আম্মু আইশার
চুলে বেনী করে দিচ্ছেন সাথে লাভ
ম্যারিজের কুফল আর এরেঞ্জ
ম্যারেজের সুফল বোঝাচ্ছেন।
-আচ্ছা নানুআপি,আব্বু আম্মুর কি লাভ
ম্যারেজ হয়েছিলো?
-আরেন্নাহ,তোমার আব্বু আম্মুতো
রাজিই ছিলোনা বিয়েতে।বিয়ের
আগে একজন আরেকজনকে সহ্যই করতে
পারতোনা।পরে আমরা বুঝিয়ে
সুঝিয়ে বিয়ে দিলাম।দেখো তারা
মাশাল্লাহ কতো সুখে আছে।ঝগড়া
ঝাটি তো দূরে থাক,কথা কাটাকাটি
ও করেনা।সবই বড়দের আশীর্বাদ আর
দোয়া বুঝছো?
-তার মানে লাভ ম্যারেজ করলে
ঝগড়া ঝাঁটি হয়?
- হ্যাঁ,হবেইতো।বাবামার বদদোয়াতে
ঝগড়া ঝাঁটি হবেই।
- বুঝলাম,আমিও তাহলে এরেঞ্জ
ম্যারিজই করবো।
.
সারাদিন ধরে এতো প্র্যাকটিস করে
রাখলাম যে আজকে তানজীম অফিস
থেকে ফিরলেই ওর সাথে কুরুক্ষেত্র
বাঁধিয়ে দিবো এখন আম্মুর কথা শুনে
ঢোক গিলে ফেললাম।আমরা লাভ
ম্যারিজে সুখে আছি।কেউ কিন্তু
আমাদের ভালোবাসার কথাটা
আম্মুকে বলবেননা প্লিজ।

লেখা:অন্তিম নীলাদ্রী

No comments:

Post a Comment