Monday, July 25, 2016

আমার দুই পাগলি

আমার দুই পাগলি

-এই উঠো উঠো বলছি?
-কি হল এত সকাল সকাল ডাকছ কেন?
-এখন সকাল কত বাজে খেয়াল আছে।।
-আরেকটু ঘুমাই তুমি ও ঘুমাও।
-মানে কি শুভ্র তোমাকে কিন্তু উঠতে বলেছি।
-আর একটু প্লিজ।
-তুমিও যেমন তোমার মেয়েটাও তেমন।
-কেন আমার মেয়ে আবার তোমার কি করল?
-তোমার মত অলস দেখ নাক ডেকে
ঘুমোচ্ছে।
-বাচ্চা মেয়ে ঘুমোচ্ছে ঘুমাক একটু ক্ষতি কি?
-ও বাচ্চা না?
-হুম আমার ছোট্ট পরী।
-ও হল ফাজিলের ডিব্বা।
-মোটেও না ও অনেক মিষ্টি।
-জান ও কেন ঘুমাচ্ছে এখন?
-কেন?
-সকালে উঠে দুষ্টুমি করছিল আমার পিছে পিছে
ঘুরছিল কয়েকবার এসে তোমার নাকটাও টিপে
দিয়ে গেছে তুমি তো ঘুমে বিভোর টের ও
পাওনি তোমার দুষ্টু মেয়ে কি করেছে।
-ও আমার লক্ষী মেয়ে।
-লক্ষী না কচু আমি যেই বলেছি তিন্নি পড়তে বস
অমনি বলে আম্মু পেটে ব্যাথা ঘুম আসতেছে।
-হা হা হা।
-হাসছ তুমি পেটে ব্যাথা হলে কারো ঘুম পায়
কখনো শুনেছ।
-বাচ্চা মেয়ে অজুহাত তো একটা দিতেই হবে।
-কচু একটুও বই পড়তে চায়না তোমার মত সারাক্ষন
শুধু এদিক ওদিক করে বেড়াবে।
-এই দেখ আমি আবার কি করলাম?
-কেন ভুলে গেছ অনার্স ভর্তি হয়ে সারাদিন ড্যাং
ড্যাং করে ঘুরে বেড়াতে কাজকর্মেও তো
সাহায্য করতেনা আব্বুকে সারাদিন মেয়েদের
পিছনে ঘুরাঘুরি।
-মোটেও না আমি একটা মেয়ের পিছনে ঘুরতাম।
-আরে সে তোমাকে পাত্তা দিতনা তাইতো?
-ধুর বাদ দাও তো ওসব আমি সব ভুলে গেছি
তোমাকে পেয়ে।
-আমিও তো ভুলে গেছি তোমাকে পেয়ে হি
হি হি।
-তিন্নি কোথায় এখন?
-ঘুমের ভান করে নাক ডাকছে যাতে আমি পড়তে
না বলি।
-আমার মেয়েটাও হয়েছে একটা পাগলী।
-তোমারই তো তুমি তো পাগল পাগলের
মেয়ে পাগলীই হবে।
-আচ্ছা মৌ শোননা?
-কি?
-তুমি এত কেন ভাল হলে?
-এই যে মিষ্টার জামাই এখন এত রোমান্টিক হতে
হবে না কাজ আছে হাতে গেলাম।
-এই মৌ শোন তুমি কিন্তু এখনো বললেনা তুমি
সবকিছু জেনেও আমাকে কেন এত ভালবাসলে
আমার সাথে ঘর বাধলে।
-তুমি জান না?
-নাহ সত্যিই জানি না।
-তা জানবে কেন তোমার সব ভালবাসা তো ওই
একটা মেয়েকে ঘিরে ছিল যে কিনা তোমাকে
পাত্তা দিতনা।
-এই মৌ আমি কিন্তু এখন তোমাকেই সবটুকু দিয়ে
ভালবাসি বিশ্বাস কর।
-আমিও তোমাকে সবটুকু দিয়ে বিশ্বাস করতাম
জানতাম তুমি একদিন আমার হবে তাইতো
তোমাকে এত ভালবাসি।
-সত্যি মৌ আমি হয়ত তোমাকে না পেলে
সারাজীবন অপূর্নই থেকে যেতাম।
-হইছে এবার ওঠেন দেখেন আপনার রাজকন্যা
উঠে কিনা।
-আরেকটু থাকিনা।
-উঠতে বলেছি কিন্তু...
-উঠছি তো.
-হি হি হি
-পাগলী।
-আর তুমি কি পাগল।
-হুম।
.
মৌটুসি ছোট্ট করে মৌ ডাকি আমার স্ত্রী।পাঁচবছর
আগে যে মেয়েটাকে পাত্তাই দিতাম না সেই
মেয়েটাই আজ আমার প্রিয় মানুষ।আগের আমি
আর এই আমি অনেক পার্থক্য।তখন সদ্য ইন্টার পাশ
করে ভার্সিটি ভর্তি হয়েছি।মৌ আমার স্কুল
জীবনের ফ্রেন্ড খুব ভাল বন্ধু।ও আমাকে
মনে মনে ভালবাসত আমি জানতাম না।ভার্সিটিতে
উঠেই একটা মেয়ের সাথে রিলেশন শিপে
জড়িয়ে পড়ি।ওটাকে কখনও প্রেম বলা যায় না কারন
মেয়েটা আমাকে ইচ্ছে মত ব্যাবহার করত আবার
দূরে ঠেলে দিত।তবুও আমি মেয়েটাকে
ছাড়তে পারতাম না কেন জানিনা ভালবেসে
ফেলেছিলাম।মৌ প্রথমত এসব জানত না।হুট করে
একদিন ওর ডায়েরী আমি পড়ে ফেলি যেহেতু
ওর বাসায় যেতাম আমি মাঝে মাঝে।লেখাগুলো
পড়ে চোখের কোনে অজান্তে পানি এসে
যায়।মেয়েটা সেই কবে থেকে আমাকে
মনে মনে ভাল বাসে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে
পারেনি।মৌ কে জিজ্ঞাসা করলাম...
-মৌ তুই কি আমাকে ভালবাসিস।
-আমি কেন তোকে ভালবাসতে যাব আজিব।
-আমি কিন্তু তোর ডায়েরী পড়েছি।
-কেন পড়েছিস না বলে হাত দিলি কেন?
-আমার ইচ্ছা হল তাই তুই কি সত্যিই আমাকে ভালবাসিস?
-হ্যা।(মাথা নিচু করল)
-কেন করলি এমন ভুল?
-ভুল মানে তুই কি আমাকে ভালবাসিস না?
-আমি একজনকে ভালবাসি মৌ।
-আমার চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল।
-ভুলে যা মৌ।(বেরিয়ে আসলাম)
ভেবেছিলাম আমি একটা রিলেশনে আছি জানতে
পারলে হয়ত মৌ আমাকে নিয়ে আর ভাববে না ভালও
বাসবে না।কিন্তু হল তার উল্টোটা মৌ বেশি করে
কেয়ার নিতে শুরু করল।আমার সব ব্যাপারে এমনকি
ওই মেয়েটার সাথে আমার রিলেশন কেমন
চলছে সে ব্যাপারেও।যদিও মৌ আর আমি দুজন দুই
ভার্সিটিতে পড়তাম তবুও কেমন করে যেন সবকিছু
জেনে যেত।
মৌ মেয়েটা ভীষন নরম।এ যুগের সাথে বড্ড
বেমানান।বেমানান বলতে অল্পেতে কাঁদে।এত
অবহেলা করি তবুও বারবার ফিরে আসে।মৌ ইন্টার
পড়ার সময় থেকে টিউশনি করায়।ভীষন লক্ষী
একটা মেয়ে ওর আব্বুর পাশে দাড়াতে চায়।আমার
সাথে যখন যেখানে দেখা হবে চোখদুটো
ছল ছল করবে সব বিষয়ে জানতে চাইবে যদিও
আমি বিরক্ত বোধ করি তবুও শোনে।আমাকে
যে কোন অনুষ্ঠানে ছোট খাটো গিফ্ট দেয়
দিয়ে বোধহয় শান্তি পায় তাই আমিও না করিনা।
আমাকে একটা শার্ট দিল যেদিন সেদিন আমার
জন্মদিন ছিল যাকে ভালবাসতাম সে আমাকে উইশ
তো দূরের কথা একবার ফোন ও করেনি।কিন্তু মৌ
ঠিকই আমাকে ভোলেনি।আমি বুঝতাম আমি কেন
এত অবহেলার পরও ওই মেয়েটাকে ভালবাসতাম
আর মৌ কেন এত অবহেলার পর আমাকে ভালবাসত।
অনেক বুঝিয়েছি দেখ মৌ আমি তোকে কখনও
মানতে পারব না তবু সেই এক কথা তুই ছাড়া আর
কাউকে মনে জায়গা দিতে পারব না সাথে কান্না সত্যি
খুব বোরিং লাগত তখন মৌ এর জ্বালাতন গুলো।
কিছুদিন পর ওই মেয়েটি আমাকে সরাসরি স্যরি
বলে সব সম্পর্ক এখানে যেন শেষ হয় বলে
দেয়।সেদিন খুব কেঁদেছিলাম চারপাশটা শূন্য
লাগছিল।রুমে দরজা বন্ধ করেও কেঁদেছি আমি
তো মন থেকে ভালবাসতাম ওকে তাহলে কেন
আমার সাথে এমন হল।সেদিন সবাই দূরে চলে
গেলেও মৌ কিন্তু যায়নি।পাগলীটা কেঁদে কেঁদে
বলে আমাকে বিয়ে করবি শুভ্র তোকে
সারাজীবন ভালবাসব কখনও ছেড়ে যাব না দেখিস।
আমি অবাক হয়ে গেছিলাম মৌ কেমন করে পারে
সব ভুলে এতটা ভাল হতে।পাগলী বলে কিনা...
-আমাকে তোর বৌ বানাবি দেখিস সারাজীবন
তোকে ভালবাসব তোর পাশে থাকব।
-আমাকে আর পাপী করিস না মৌ।আমার সুখের
দিনগুলোতে তোকে অবহেলা করেছি এখন
দুঃখের সময়ে তোকে জড়াতে পারব না এটা
অন্যায় আমি তোকে ব্যাবহার করতে পারব না।
-ব্যাবহার বলছিস কেন পাগল তুই পারবিনা সবকিছু ভুলে
আমাকে ভালবাসতে?
-জানিনা মৌ আমাকে একটু কাঁদতে দিবি তোর কাঁধে
মাথা রেখে।
-হ্যা দিব তবে শুধু কিছুক্ষনের জন্য কারন যে
তোকে ভালবাসেনা তার জন্য কাঁদার কোন
প্রশ্নই ওঠেনা।
-তুই এত কেমন করে সহ্য করিস মৌ।
-তোকে জানতে হবেনা পারবিনা আমার হাতটা
ধরতে।
-জানিনা আমি বাঁচবনা আর।
-ছি শুভ্র এসব কথা মুখেও আনবি না।
সেদিন অনেক কষ্ট হয়েছিল ভেবে ভেবে
মেয়েটা কেন ঠকাল আমাকে।ওর জন্য কিনা এমন
একজনকে অবহেলা করলাম যে আমাকে নিজের
থেকেও বেশি ভালবাসে।তবে বেশিদিন কাঁদতে
হয়নি মৌ বোধহয় যাদু জানে।কেমন করে সব
ভুলিয়ে কখন যে আমার মনে ওর জন্য ভালবাসার
বীজ বপন করে দিল বুঝিনি।সত্যিই মৌ আমাকে
ভালবাসতে বাধ্য করেছিল।আমার জীবনটাও বদলে
গেল।পারিবারিক অনুমতিতেই মৌ কে বিয়ে করি।
আমাদের বিয়ের বয়স এই পাঁচবছর আটমাস।
দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন কেটে
গেল।তবুও মৌ যেন আমাকে আরও নতুন করে
ভালবাসে। মুগ্ধ হয়ে যাই ওকে দেখে।এতটা
ভালবাসা আমার কপালে লেখা ছিল সত্যিই আমি
অনেক ভাগ্যবান।মৌ আর আমার মাঝে এসেছে
ছোট্ট তিন্নি।ওকে ঘিরেই আমাদের সব ইচ্ছে
গুলো এখন সাজানো।ভীষন দুষ্টু হয়েছে
মেয়েটা।
.
-এই শুভ্র কি ভাবছ এত?(মৌ ডাক দিল ধ্যান ছেড়ে
বাস্তবে ফিরলাম)
-কিছু না তো।
-বললে হল কিছু তো ভাবছিলে বল?
-হ্যা তোমার পাগলামী আমাকে ভালবাসতে কতটা
তাই ভাবছিলাম।
-ভালবাসতাম মানে এখন বুঝি বাসি না।
-হ্যা বাস তো।
-তাহলে বললে কেন?
-আরে পাগলী ওটা কথার কথা।
-হুম।এই শোন তিন্নিকে বই নিয়ে পড়াতেই
পারছিনা দেখ না তুমি কিছু বল।
-আমি কি বলব বল?
-একটু ধমক দাও।
-আমি পারব না।
-কেন তুমি না ওর বাবা তোমার কথা নিশ্চয়ই শুনবে।
-শুনবে কিন্তু পরে রাগ করে কতদিন যে কথা
বলবেনা তুমি জান তখন কি হবে।
-তুমি দাও তো কিছু হবেনা।
-এই দাড়াও দাড়াও তুমি না বাচ্চা পড়াতে এখন নিজেরটা
পার না কেন শুনি?
-নিজেরটা তো মহা ফাজিল যাদের পড়াতাম তারা তো
এত দুষ্টু ছিলনা।
-হা হা হা হা।
-আম্মু আম্মু তুমি কাদের পড়াতে?(মা আমার
এসেছে গুটি গুটি পায়ে)
-তোমার মত পুচকিদের পড়াত।(বলেই কোলে
তুলে নিলাম)
-হু আমি পুচকি না বুড়ি।
-ওলে বাবালে তাই তো তুমি পড় না কেন শুনি
আম্মু কিন্তু বকা দিবে।
-বললেই হল আমি পড়ব না পড়াব।
-এ মা কাকে পড়াবে তুমি?(মৌ)
-তোমাকে হি হি হি।
ছোট ছোট দাঁতগুলো বের করে হাসছে
পাগলীটা।আমরাও সাথে যোগ দিলাম।মৌ আমার
হাতে হাত রেখেছে।চোখে চোখ পড়তেই
টিপ্পুনি দিল।এ মা মা মেয়ে দুটোই তো দেখি
ফাজিলের ডিব্বা।।।।।
.
.
লিখা:অন্তহীন শ্রাবন

No comments:

Post a Comment