Thursday, July 21, 2016

<স্বপ্নের অপ্সরী>

<স্বপ্নের অপ্সরী>

লেখা : Mahbub Khondokar Whridoy (রক্তচক্ষু
পিশাচ)
.
ঘুম ভাংতেই স্বপ্নের কথাটা
ভেবে মুচকি হাসে হৃদয়।
-কে ছিলো মেয়েটা?
কেনোইবা বারবার বলছিলো
ভালোবাসি, আমায়
ভালোবাসো?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে
হৃদয়।তবে সে জানেনা এর
উত্তর। হয়তো এর জন্য তাকে
আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে।
.
ভার্সিটিতে আজ ক্লাসে
মনোযোগ নেই তার।প্রায় এক
সপ্তাহ ধরে একই স্বপ্ন দেখছে
সে।বারবার, মেয়েটার কণ্ঠ
কানে বাজছে। বাতাসে
উড়ন্ত তার খোলা চুল যেনো
হৃদয়ের মনে দোলা দিয়ে
যাচ্ছে বারবার।
ক্লাস আর না করেই বাইরে
চলে এলো হৃদয়।
-মেয়েটা কে?
প্রশ্নটা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা
খেয়ে পিছনে তাকায় সে।
দেখে তার বান্ধবী পপি
দাঁড়িয়ে।
-মেয়েটা কে? বললিনাতো।
-এক টেনশন থেকে মুক্তি
নাই,আরেক টেনশন হাজির
(মনে মনে)
-ঐ বয়রা শুনিসনা?
-হ্যাঁ।কিন্তু তুই কেমনে
জানলি যে আমি কারো কথা
ভাবছি?
-সিক্রেট। হাহাহাহা। এবার
সব খুলে বল।
হৃদয় তাকে সব বর্ণনা দেয়।
-হুম,জটিল সমস্যা
-হুম।তবে যাই বলিস,নীল
শাড়িতে তাকে অপূর্ব
লাগছিলো। শুধু তার
চেহারাটা একবারো
দেখতে পাইনি
-তুইতো স্বপ্নের অপ্সরীর
প্রেমে পড়সিসরে
-বাহ,ভালোই
-কচু ভালো।যা বাসায় যা।
বাহিরে একা একা হাঁটতে
থাকে হৃদয়।হালকা বাতাস আর
হালকা বৃষ্টি মিলে
অসাধারণ পরিবেশ তৈরি
করেছে।
আর এ পরিবেশকে সঙ্গ দিচ্ছে
হৃদয়।
.
হৃদয় খুব ভালো ছবি আঁকতে
পারে।বাসায় গিয়ে সে তার
স্বপ্নের অপ্সরীর হুবুহু একটা ছবি
আঁকে।তবে মুখটা অপুর্ণ রাখে।
সকালে কারো চিৎকারে ঘুম
ভাঙ্গে তার। তাকিয়ে
দেখে রাগী মুখে পপি
তাকিয়ে আছে।
-উফ,তুই আর শান্তি দিলিনা
-সারারাত কি করিস যে
এতো দেরিতে ঘুম ভাঙ্গে?
তোরতো জ্বর
-গতকাল পুরো পথ বৃষ্টিতে
ভিজসি
-তুইতো জানিস তোর হালকা
বৃষ্টির পানিতে জ্বর হয়।তুই
এত্তো কেয়ারলেস ক্যান?
এরপরে আর ভিজবিনা
-আচ্ছা। গত রাতে তার ছবি
আঁকসি
-কই? কই? আমায় দেখা
-ঐ যে
-ওমা মুখ কই এর?
-তার চেহারাটাইতো
দেখিনি।এক প্রকার রহস্য এটা
-স্যাড।
প্রতি রাতে একই স্বপ্ন,একই কথা
তার কাছে কেমন যেনো
লাগতে থাকে।
মেয়েটা ক্ষণিকের জন্য এসেই
হারিয়ে যায়।
আর তার চেহারা দেখতে না
পাওয়াটাও যেনো এক মধুর
যন্ত্রণার।
.
-আচ্ছা, যদি সে তার স্বপ্নের
অপ্সরীর খোঁজ পেয়ে
যায়,তাহলে আমার কি হবে?
আমি যে পাগলটাকে খুব
ভালোবাসি।
নিজেকে বলে উঠলো পপি।
আজ পপির জন্মদিন।
সবাই এসেছে, অথচ হৃদয়
আসেনি।পপি রাগে ফুঁসছে।
হৃদয়কে আসতে দেখে পপি
খুশি হয়।
-হ্যাপী বার্থডে পাগলী
-এতো দেরি ক্যান!
-তোর জন্য একটা জিনিস
আনতে গিয়ে দেরি হলো
-কি?
-তোর মেজাজ শুধু গরম
থাকেতো,তাই এ আইস প্যাক
তোর জন্য।
হৃদয়ের কথা শুনে পপি বাচ্চা
মেয়ের মতো খিলখিল করে
হাসতে থাকে।
হৃদয় পপির দিকে এক দৃষ্টিতে
চেয়ে আছে। কখনোই সে
তাকে বন্ধুর চেয়ে বেশি
ভাবেনি ;কিন্তু আজ ভাবতে
ইচ্ছা হচ্ছে।
-দেখতো নীল শাড়িতে
আমায় কেমন লাগছে?
হৃদয় অবাক হয়।
-এ সাজতো আমার স্বপ্নের
অপ্সরীর মতো!
-তাই বুঝি?
-হুম।
কেক কাটার পর পপি একা
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয়
তাকে দেখে যাচ্ছে অপলক।
নীল শাড়ি আর উড়ন্ত চুলে
তাকে স্বপ্নের অপ্সরীর মতো
লাগছে একদম।
-কিরে হৃদয় এখানে?
-এমনিই। আজ তোকে অপ্সরীর
মতো লাগছে
-পাম দিস?
-বান্ধবীকে মাঝে মাঝে
পাম দিতে হয়
-হাহাহাহা, পাগল।
.
বাসায় ফিরার পর হৃদয় ভাবতে
থাকে
-আচ্ছা, আমি কি পপিকে
আমার স্বপ্নের অপ্সরী
হিসেবে চাইলে কি খুব বড়
চাওয়া হবে?
রাতে আর দুচোখের পাতা এক
করতে পারেনি সে।শুধুই পপির
হাসিমাখা মুখটা ভেসে
উঠছে।
প্রতিদিনই পপিকে যেনো খুব
কাছে পেতে ইচ্ছা হয়।
ইদানিং সে যতোবারই তার
অপ্সরীকে স্বপ্নে দেখছে
ততোবারই পপির চেহারাটা
দেখতে পায়।
-তার মানে কি পাগলীটাই
আমার স্বপ্নের অপ্সরী?
কথাটা ভাবতেই তার পুরো
দেহে একটা শিহরণ বয়ে যায়।
রাতে বৃষ্টি পড়তে থাকে খুব।
হালকা শীতল বাতাসে
রাতের এ বৃষ্টিভেজা
পরিবেশটা আরো অসাধারণ
হয়ে উঠে।
হৃদয় কল্পনার জগতে হারায়। সে
ভাবতে থাকে, হয়তো পপি
এখন তার খোলা চুলে
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি
ছোঁয়ার চেষ্টা করছে,
বাতাসে তার খোলা
চুলগুলো উড়ছে আর তার সাথে
বেরুচ্ছে এক মিষ্টি সুবাস।
বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে
পপির চেহারায় অদ্ভুত মায়া
খেলা করছে যেনো।
পপির ফোনে ভাবনার অবসান
ঘটে।
-হ্যালো
-কিরে কি করিস?
-প্রিয় মানুষকে কল্পনা করি।এ
বৃষ্টিভেজা দিনে নিজের
প্রিয় মানুষকে নিয়ে কল্পনায়
হারানোর অনুভূতিই আলাদা
-তুই প্রিয় মানুষ পাইলি কবে?
-পেয়েছি পেয়েছি
-কে?
-পরে জানাবো
-আচ্ছা রাখি।
পপির কন্ঠে কান্না ভাব।
-সে কি অন্য কারো হতে
যাচ্ছে! তাহলে তাকে
নিয়ে বুনা স্বপ্নের জাল
এতোই দুর্বল ছিলো যা
নিমিষেই শেষ?
পপি কাঁদতে থাকে। তবে
একা নয়, প্রকৃতিও তাকে সঙ্গ
দিচ্ছে।
হৃদয়কে হারানোর ভয় তাকে
পেয়ে বসে।
.
ভার্সিটিতে পৌঁছেই হৃদয়কে
আজ বিকালে পার্কে দেখা
করতে বলে পপি।
পার্কে এসে হৃদয় কিছুটা
ঘাবড়ে যায়।কেনোনা পপি
এমন কখনো করেনি।আর পপির
চেহারায় কেমন রাগের ছাপ।
-ঐ হারামি
-কি?
-যা জিজ্ঞেস করবো উত্তর দে
-(চুপ)
-তোর লাইফে কেউ স্পেশাল
আছে?
-বাবা, মা এরাইতো স্পেশাল
-এটা ছাড়াও কোনো মেয়ে?
-হুম
-কে?
-আমার স্বপ্নের অপ্সরী
-রাখ তোর অপ্সরী। যাকে
দেখিসনাই তারে
ভালবাসিস!
-আমিতো তাকে পেয়ে
গেছি
-কিইইইই!
-হ্যাঁ
-কে সে?
-পরে বলবো। ডাকসিস ক্যান
আগে সেটা বল
-ঐ শোন,যদি অন্য কোনো
মেয়ের কথা আর মুখে
আনিস,তাহলে তোকে
মেরেই ফেলবো।
পপির চোখ জলে ভিজে
যাচ্ছে, আর হৃদয় তাকিয়ে
দেখছে। তার কাছে এটা এ
মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর
দৃশ্যগুলোর মাঝে একটি।
-আমার অপ্সরীকে দেখতে
চাস? তার চেহারাটা
গতরাতে কমপ্লিট করসি
-না জানি কোন ফালতু মেয়ে
হবে, আদৌ তোর যোগ্য কিনা
সন্দেহ। এমন মেয়েকে আবার
ভালোবাসে!হুহ!দেখা তোর
পেত্নীকে
-এই দেখ
-আমার ছবি ক্যান দেখাস?
-কারন তুইই যে আমার স্বপ্নের
অপ্সরী।
কথাটা শুনে একেবারেই থ
হয়ে যায় পপি।
তাকে এখন বোকা উপাধি
দিলেও ভুল হবেনা।
-ত..ত..তুই কি ফান করছিস?
-নারে পাগলী।আমি সত্যিই
বলছি।
তুই জানিস, তোর জন্মদিনের
দিন তোকে প্রথম বন্ধুর চেয়ে
বেশি ভাবি।তোর সেই
হাসিটাই আমায় তোর প্রেমে
ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিলো।
তারপর থেকে কেনো
জানিনা সেই অপ্সরীর মাঝে
তোকে দেখতে পাই।গত
রাতে যে প্রিয় মানুষটাকে
নিয়ে কল্পনার রাজ্যে
হারিয়েছিলাম সেটা তুই।
-তাহলে এতোদিন বলিসনি
ক্যান?
-আজতো বলতাম। কিন্তু এর
আগেইতো তুই বকা দেয়া শুরু
করলি
-তোকে হারানোর ভয়ে
ছিলাম। এখন প্রপোজ কর,নাহয়
গেলাম।
পপি উঠে যেতে গেলে হৃদয়
কিছুটা হিরোর মতো পপির
হাত ধরে বলা শুরু করে,
-"ভালোবাসা কিভাবে
প্রকাশ করে তা জানিনা।
তবে কোনো এক বৃষ্টিভেজা
রাতে তোর হাতে হাত
রেখে বৃষ্টির পানি ছুঁতে
চাই,তোর উড়ন্ত খোলা চুলের
স্পর্শ পেতে চাই,তোর মাঝে
নিজেকে হারাতে চাই।
ভালোবাসি তোকে
-আমিও খুব ভালোবাসি
তোকে। এইবার উঠ,আর গাধার
মতো বসে থাকিসনা
-আচ্ছা এভাবে আমার ঐ
অপ্সরীকে প্রপোজ করলে
কেমন হবে?
-তবেরে,দাঁড়াও দেখাচ্ছি
মজা।
.
সূর্যের শেষ আলোয়
ভালোবাসায় লিপ্ত দুটি
মানুষকে দেখা যাচ্ছে।
সূর্যাস্তের মাধ্যমে একটি
দিনের শেষ হলো ;কিন্তু
হালকা দুষ্টুমির মধ্য দিয়ে
তাদের জীবনে
ভালোবাসার নতুন সূর্যের উদয়
হলো।

No comments:

Post a Comment